তৃণমূল সাংসদের পুত্রের ছবির সঙ্গে রাজনৈতিক পোস্ট, পুত্রের দাবি তিনি জানেনই না ...
আজকাল | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা বিধানসভায় 'পরিবর্তন চাই'। এমনই দাবি তুলে গত বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন ব্যক্তির সমাজমাধ্যম অ্যাকাউন্ট থেকে একাধিক পোস্ট নানা সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনাকে ঘিরে তীব্র বিতর্ক তৈরী হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলায়। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে কে বা কারা,কী উদ্দেশ্য নিয়ে এই পোস্টগুলো করছে।
বিতর্ক বড় হয়েছে এই পোস্টগুলোতে জঙ্গিপুরের তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ খলিলুর রহমানের বড় ছেলে মোস্তাক আজাদ ওরফে পাপ্পুর ছবি থাকায়। তৃণমূল সাংসদের বড় ছেলে সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে এখনও যুক্ত নন। তিনি মূলত ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফরাক্কায় তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে তীব্র চাপানউতোর শুরু হয়েছে। মোস্তাক আজাদ পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, সমাজমাধ্যমে হওয়া এই পোস্টগুলোর বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তৃণমূল সূত্রের খবর, গত প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে বেশ কিছু ব্যক্তির সমাজমাধ্যমের পাতা এবং তৃণমূল কংগ্রেসের নাম করে তৈরি হওয়া সমাজমাধ্যমের পাতায়- মিশন ফরাক্কা বিধানসভা ২০২৬ বলে লেখা হচ্ছে, আর কিছুদিনের অপেক্ষা তারপরেই ফরাক্কাবাসী পেয়ে যাবেন এমএলএ হিসেবে নতুন মুখ।
বিভিন্ন ব্যক্তির সমাজমাধ্যমের পাতা থেকে এই পোস্টগুলো করা হলেও বেশিরভাগ পোস্টেই ভাষা এবং বক্তব্য একই থাকছে। সেখানে লেখা হচ্ছে ,খলিলুর রহমানের সুযোগ্য পুত্র মোস্তাক আজাদ ওরফে পাপ্পুদা আগামী দিন ফরাক্কার বিধায়ক হবেন এবং তাঁর হাত ধরেই ফরাক্কা বিধানসভা এলাকায় অনেকগুলো বাকি থাকা গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করা হবে। তৃণমূল সূত্রের খবর, সাংসদ পুত্রের ছবি দিয়ে বিভিন্ন রকমের পোস্ট সমাজ মাধ্যমের পাতায় হতে থাকায় কিছুদিন আগে ফরাক্কা তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম জঙ্গিপুর সংগঠনিক জেলার বিধায়ক-সাংসদ এবং তৃণমূলের ভোট কুশলী সংস্থার কয়েকজন আধিকারিকদেরকে নিয়ে তৈরি হওয়া একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কিছু 'স্ক্রিনশট' পোস্ট করে বিষয়টি সকলের নজরে আনেন। এর পাশাপাশি গত শনিবার মনিরুল গোটা বিষয়টি জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপারকেও জানিয়েছিলেন বলে সূত্রের খবর।
এছাড়াও বিভিন্ন পোস্টের স্ক্রিনশট খলিলুর রহমানকে কেউ পাঠিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তবে সাংসদের তরফ থেকে এই বিষয়ে কোনও উত্তর না পাওয়ায় যথেষ্টই ক্ষুব্ধ ফরাক্কার তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। যদিও যার ছবি ব্যবহার করে সমাজমাধ্যমের পাতায় বিভিন্ন পোস্ট ঘিরে এই বিতর্ক সেই মোস্তাক আজাদ বলেন ,'সমাজমাধ্যমের পাতায় আমার কোনও অ্যাকাউন্ট নেই। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ফরাক্কা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ভোটে প্রার্থী হতে চেয়ে আমি কোথাও কোনওরকম পোস্ট করিনি। কারা এসব কান্ড করেছে সেই বিষয়ে আমার কোনও ধারণা নেই।' তৃণমূল কংগ্রেসের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার এক শীর্ষ নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার একাধিক বিধায়কের সঙ্গে খলিলুর রহমানের সম্পর্ক অত্যন্ত 'শীতল' হয়ে গিয়েছে। সূত্রের খবর, সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিপুর সংগঠনিক জেলার বেশিরভাগ বিধায়ক একত্রিত হয়ে খলিলুর রহমানকে সাংগঠনিক জেলা সভাপতির পদ থেকে সরানোর জন্য দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে চিঠি লিখে আবেদন করার পরিকল্পনা করেছিলেন। সাগরদিঘির বিধায়ক বাইরণ বিশ্বাস সেই বৈঠকে উপস্থিত না থাকায় তিনি ওই চিঠিতে সই করেননি। কিন্তু ফরাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম প্রকাশ্যেই বাকি বিধায়কদের সঙ্গে বিরোধিতা করে জানিয়েছিলেন খলিলুর রহমানকেই সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পদে রাখতে হবে। মনিরুলের সঙ্গে খলিলুরের সম্পর্ক 'শীতল' হতে থাকায় দলের অনেকেই অবাক হয়েছেন।
মনিরুল ইসলাম বলেন,' দলের সংগঠনিক জেলা সভাপতি হিসেবে খলিলুর রহমানের উচিত তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম ব্যবহার করে সমাজমাধ্যমের পাতায় দল বিরোধী কী পোস্ট করা হচ্ছে সেদিকে নজর রাখা। আমি তাঁকে গোটা ঘটনাটি হোয়াটসঅ্যাপ করে জানিয়েছিলাম। তিনি হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দেখেও আমাকে কোনও উত্তর দেননি।' জঙ্গিপুরের তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান বলেন,' সমাজমাধ্যমে কে, কোথায় কী পোস্ট করেছে এবিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। কোন বিধানসভা কেন্দ্রে কে টিকিট পাবে এই বিষয়ে আমার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। এটা দলের শীর্ষ নেতৃত্বর তরফ থেকেই নেওয়া হবে।' তিনি জানান ,'উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য আমি এই মুহূর্তে দিল্লিতে রয়েছি। আমি কলকাতা ফিরে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে গোটা বিষয়টি জানাব।'