বকেয়া আদায়ের জন্য মৃতদেহ আটকে রাখা যাবে না, কড়া নির্দেশিকা রাজ্য সরকারের...
আজকাল | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজ্যে বারবার অভিযোগ উঠছিল বেসরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে রোগীর মৃত্যু হলে আত্মীয়দের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তর করতে বিলম্ব করা হচ্ছে। কোথাও চিকিৎসার খরচ বাকি আছে বলে, কোথাও আবার বিমা সংস্থা থেকে বিল মিটবে কি না তার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ফলস্বরূপ শোকার্ত পরিবারকে রোগীর মৃতদেহ পাওয়ার আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এই পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত গুরুতর ও অসংবেদনশীল’ বলে কড়া অবস্থান নিল পশ্চিমবঙ্গ ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন। নতুন নির্দেশিকায় কমিশন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, কোনও ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট কোনও অবস্থাতেই মৃতদেহ আটকে রাখতে পারবে না। আইন অনুযায়ী মৃত্যুর পরে সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে মৃতদেহ আত্মীয়দের হাতে তুলে দিতে হবে।
কমিশনের তরফে কড়া পদক্ষেপ নিয়ে জানানো হয়েছে-
১. পশ্চিমবঙ্গ ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশনকে পশ্চিমবঙ্গ ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্টস (রেজিস্ট্রেশন, রেগুলেশন অ্যান্ড ট্রান্সপারেন্সি) আইন, ২০১৭-এর ধারা ৩৮(১) ও (২) অনুযায়ী ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্টগুলির কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি তাদের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।
২. একই সঙ্গে উক্ত আইনের ধারা ৭(২)(কে) অনুযায়ী কোনও রোগী বা সেবাগ্রহীতার মৃতদেহ তাঁর প্রতিনিধি/আত্মীয়দের কাছে বিল বা অন্যান্য আর্থিক সমস্যার কারণে, এমনকি চিকিৎসার খরচ মেটাতে অক্ষমতার জন্যও, হস্তান্তরে কোনও বিলম্ব করা যাবে না। তবে ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্টের অধিকার থাকবে প্রাপকের প্রতিনিধি থেকে পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা খরচ ও বকেয়া আদায় করার।
৩. উক্ত আইনের ধারা ৭-এ লাইসেন্স সংক্রান্ত শর্তাবলীর উল্লেখ রয়েছে এবং সেই শর্তাবলী ভঙ্গ করলে সংশ্লিষ্ট ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্টের লাইসেন্স বাতিল হতে পারে।
৪. কমিশনের নজরে এসেছে যে, একাধিক ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট লাইসেন্স সংক্রান্ত শর্তাবলী যথাযথভাবে মেনে চলছে না এবং মৃতদেহ হস্তান্তরে বিলম্ব করছে বা আটকে রাখছে বকেয়া আদায়ের জন্য এবং মেডিক্লেইমের ক্ষেত্রেও বিমা সংস্থা থেকে বিল অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত মৃতদেহ আটকে রাখছে। কমিশন এ ধরনের মৃতদেহ হস্তান্তরে বিলম্ব/প্রতিবন্ধকতাকে অত্যন্ত গুরুতরভাবে বিবেচনা করছে।
৫. মেডিক্লেইম অনুমোদনের জন্যও অপেক্ষা করানো যাবে না। সংশ্লিষ্ট সময়ের মধ্যে মৃতদেহ পরিজনকে হস্তান্তর করতে হবে অন্যথায় কঠিন সাজা হতে পারে কিংবা লাইসেন্সও বাতিল হতে পারে ওই সংস্থার।
এছাড়াও কমিশন আরও স্পষ্ট করে দিয়ে জানিয়েছে, মৃতদেহ হস্তান্তরে বিলম্ব হলে তা নথিভুক্ত করতে হবে এবং কারণ কমিশনকে জানাতে হবে। তবে পরিবারের তরফে যদি লিখিতভাবে অনুরোধ করা হয় যে, যথাযথ কারণে মৃতদেহ কিছু সময়ের জন্য মর্গে রাখা হোক এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি তা মেনে নেয়, সেক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।
কমিশনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, একাধিক ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট এই বিষয়ে লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে কমিশনের নজরে এলে, আইনের ধারা অনুযায়ী লাইসেন্স সংক্রান্ত শর্ত ভঙ্গ করলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল হতে পারে বলেও কমিশন সতর্ক করেছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য মহলে এই নির্দেশকে স্বাগত জানানো হয়েছে। সাধারণ মানুষের বক্তব্য, এতে অন্তত মৃত্যুর পর প্রিয়জনের মরদেহ নিয়ে টানাটানি ও অমানবিক ভোগান্তি অনেকটাই কমবে।