• যোগীরাজ্যে বাংলার ১৮ শ্রমিককে আটক পুলিশের
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • বাংলা ভাষায় কথা বলায় বাংলাদেশি সন্দেহে ফের উত্তরপ্রদেশে হেনস্থার শিকার মুর্শিদাবাদের ১৮ জন ফেরিওয়ালা। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন আটক ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা। এবিষয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লালবাগ) রাসপ্রীত সিংহ জানিয়েছেন, ১৮ জন ফেরিয়ালাকে আটক করা নিয়ে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। দ্রুত তাঁদের মুক্ত করার চেষ্টা চলছে।

    জানা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের বস্তি জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে শিশুদের প্লাস্টিকের খেলনা ও গৃহস্থালির সরঞ্জাম বিক্রি করতেন বহরমপুর থানা এলাকার ১৮ জন। নগর থানা এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন তাঁরা। গত শুক্রবার গভীর রাতে সেই বাড়িতে হানা দিয়ে বাংলাদেশি সন্দেহে তাঁদের আটক করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। অভিযোগ, পরিচয়পত্র দেখালেও তাঁদের ছাড়া হয়নি। বাংলায় কথা বলার জন্য তাঁদের উপর অকথ্য অত্যাচার চালানো হয়। খবর পেয়ে তাঁদের ছাড়াতে থানায় যান বাড়ির মালিক। কিন্তু ১৮ জনকে মুক্তি দিতে তাঁর কাছে টাকা দাবি করা হয়। পরে ওই ফেরিওয়ালাদের পরিবারের সদস্যদের খবর দেন বাড়ির মালিক। এরপর মুর্শিদাবাদের স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হন তাঁরা।

    বহরমপুর থানার হালসাপাড়া এলাকার বাসিন্দা হজরত শেখ, শক্তিপুর থানার কাজিপাড়া এলাকার সাগর শেখ, লাহারপাড়া এলাকার আনিজুল শেখ, চৌরীগাছার কালিমউদ্দিন শেখ সহ জেলার বেশ কয়েকজন বিগত ২০–২৫ বছর ধরে উত্তরপ্রদেশের বস্তি জেলায় ফেরি করে দিন গুজরান করেন। শুক্রবার তাঁদের উত্তরপ্রদেশের বাড়িতেই অভিযান চালায় পুলিশ। আধার কার্ড, ভোটার কার্ড দেখানোর পরেও তাঁদের আটক করে রাখা হয় বলে অভিযোগ। থানায় ওই ফেরিয়ালাদের নিজেদের রান্না নিজেদেরই করে খেতে হচ্ছে। তাও ঠিকমতো খাবার জুটছে না। আটক শ্রমিকদের মোবাইলও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে শক্তিপুর থানার সাগর শেখ অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল লুকিয়ে রেখে ভিডিও রেকর্ড করেন। এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা। সেই ভিডিও ইতিমধ্যেই হাতে পেয়েছে রাজ্য প্রশাসন। ইতিমধ্যেই বিষয়টি মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ সুপার, জেলাশাসক এবং শ্রমদপ্তরের আধিকারিকদের জানানো হয়েছে।

    শক্তিপুর থানার হালসানা পাড়ার ফেরিওয়ালা ফজল শেখ বলেছেন, ‘বৈধ আধার কার্ড, ভোটার কার্ড এমনকী প্যান কার্ড দেখানো সত্ত্বেও আমাদের আটকে রাখা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ বলছে আমরা নাকি বাংলাদেশি। অথচ আমরা ভারতীয়। গত তিনদিন ধরে আমাদের বিনা কারণে আটকে রেখেছে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ।’ বহরমপুর থানার রাঙামাটি চাঁদপাড়া এলাকার আরশেদ শেখ বলেন, ‘আমরা বিগত কয়েক বছর ধরে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাড়ি বাড়ি মাথার চুল কিনে থাকি। হঠাৎ করে আমরা বাংলাদেশি হয়ে গেলাম! আমাদের কিছুতেই ছাড়া হচ্ছে না। নিজেদেরই রান্না করে খেতে হচ্ছে। ঠিকমতো দু’বেলা খাবার জুটছে না।’ সাটুই এলাকার মহসিন শেখ জানিয়েছেন, ১৮ জনের মধ্যে ৫ জনকে দু’ঘণ্টার জন্য রান্না করতে বলা হচ্ছে। ওই ৫ জন কষ্ট করে ভাত, তরকারি রান্না করছেন। এভাবে কতদিন তাঁদের আটকে থাকতে হবে তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না।

    উল্লেখ্য, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলায় কথা বলায় বাংলাদেশি সন্দেহে তুলে নিয়ে গিয়ে হেনস্থার ঘটনা নতুন নয়। এর প্রতিবাদে আগেই সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরাতে চালু হয়েছে শ্রমশ্রী প্রকল্প। পাশাপাশি বাংলা ভাষার উপর সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে ভাষা আন্দোলন। এই আবহে একের পর এক পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। আতঙ্কে অনেকে নিজে থেকে বাড়িতে ফিরে আসছেন। বিজেপি শাসত রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের মেরে হাত পা ভেঙে দেওয়ার মতো ঘটনাও প্রকাশ্যে এসেছে। এই আবহে ফের ভিনরাজ্যে কর্মরত বাঙালি শ্রমিককে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)