বালি পাচার মামলায় রাজ্যের অন্তত ২২টি জায়গায় হানা দিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। কলকাতা, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনার বেশ কয়েকটি ঠিকানায় সোমবার ভোরে তল্লাশি চালান তদন্তকারীরা। বালি পাচারের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে বালি ব্যবসায়ী-সহ একাধিক ব্যক্তির বাড়িতে হানা দেয় কেন্দ্রীয় সংস্থা। সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। ইডির অনুমান, বালি পাচারের টাকা বিমায় বিনিয়োগ করা হয়েছে। ৩ মাস ধরে এই নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছিলেন তদন্তকারীরা। তদন্তে তাঁরা জানতে পারেন, রাজ্যের একাধিক জায়গায় বালি পাচারের সিন্ডিকেট চলছে। এরপরই সোমবার রাতে প্রায় একই সঙ্গে সবকটি ঠিকানায় হানা দেয় ইডি।
এদিন বেশ কয়েকটি বালি খাদানের মালিকের বাড়ি ও তাঁদের অফিসে তল্লাশি চালিয়েছে ইডি। এর পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বিমা সংস্থার অফিসেও তল্লাশি চালানো হয়। বালি পাচারের টাকা বিমায় বিনিয়োগ করা হত বলে যে তথ্য তদন্তকারীদের কাছে রয়েছে সেই সম্পর্কে আরও জানতে তল্লাশি শুরু করেছে ইডি। জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রাম জেলার মোট ৬টি জায়গায় অভিযান চালিয়েছে ইডি। সেগুলির মধ্যে রয়েছে গোপীবল্লভপুরে সুবর্ণরেখা নদীর পারে শেখ জহিরুল শেখের তিনতলা বাড়ি। আগে তিনি ভিলেজ পুলিশ ছিলেন। পরে সেই চাকরি ছেড়ে বালির কারবার শুরু করেন। তাঁর বালির খাদান রয়েছে। তাঁর গাড়িতেও তল্লাশি চালান তদন্তকারীরা। জহিরুলের বাড়ি ও গাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি কলকাতায় বেহালা, রিজেন্ট কলোনি, সল্টলেক, টালিগঞ্জের কয়েকটি ঠিকানায় তল্লাশি চালায় ইডি।
সল্টলেকের এফই ব্লকে অরুণ শ্রফ নামের এক ব্যবসায়ীর বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়। বেহালার জেমস লং সরণীতে জিডি মাইনিং নামে একটি সংস্থার কার্যালয়ে হানা দিয়েছে ইডি। কল্যাণীতে মাইনিং সংস্থার কর্তা ধীমান চক্রবর্তীর বাড়িতে তল্লাশি চালায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। প্রায় ৮ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালানোর পর বিকেল ৩টে নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান ইডির কর্তারা। তল্লাশির প্রাথমিক পর্যায়ে একজন আধিকারিক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হলে ফের চলে তল্লাশি। জানা গিয়েছে, এদিন তল্লাশির সময় ধীমান বাড়িতেই ছিলেন। তাঁকে একাধিক বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর বেশ কিছু নথি উদ্ধার করে নিয়ে যায় তদন্তকারীরা। পশ্চিম মেদিনীপুরে সৌরভ রায় নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছে ইডি। তিনি বালির অবৈধ কারবারের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
তদন্তকারীদের অনুমান, অবৈধভাবে নদী থেকে বালি তুলে অতিরিক্ত লরি পাঠিয়ে বালি পাচারের কাজ করতেন খাদানের মালিকরা। লরির নম্বরও বদলে দেওয়া হত। বালি তোলার ক্ষেত্রে যে নম্বরের লরিকে অনুমতি দেওয়া হত সেই নম্বর ব্যবহার করেই একাধিক লরি বালি তোলার কাজ করত। সেই কারণে প্রশাসনের বুঝে ওঠার আগেই বালি পাচার হয়ে যেত। আপাতদৃষ্টিতে দেখে মনে হত, অনুমতি পাওয়া গাড়িই বালি তুলছে। কিন্তু অনুমতি পাওয়া একটি নম্বর প্লেট ব্যবহার করেই একাধিক লরির মাধ্যমে চলত বালি পাচার। বালি তোলার অনুমতি পত্রে কিউআর কোড দেওয়া হত। সেই কোডকেও জাল করা হত।