বালি পাচার মামলায় ঝাড়গ্রাম জেলার মোট ৬টি জায়গায় অভিযান চালিয়েছে ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। গোপীবল্লভপুর ১ ও ২ ব্লকের একাধিক জায়গায় সোমবার অভিযান চালায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের নয়াবসান এলাকায় শেখ জাহিরুল আলি নামে এক বালি ব্যবসায়ীর বাড়িতে ভোর হতেই হাজির হয় ইডির একটি দল। সেখান থেকে লক্ষাধিক টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। অন্যদিকে নয়াবসানের ডোমপাড়ায় জি ডি মাইনিংয়ের অফিসে যায় ইডির অন্য একটি দল।
গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের ভামাল গ্রামে অমরজিৎ বেরা এবং আশকোলায় দুঃখীরাম বাগের বাড়িতে যান তদন্তকারীরা। যদিও দুজনেই বাড়িতে ছিলেন না। অমরজিৎ ও দুঃখীরাম দুই জনেই লরির চালক। গত মে মাসের গোড়ার দিকে অমরজিৎ ও দুঃখীরামকে গ্রেপ্তার করেছিল নয়াগ্রাম থানার পুলিশ। অভিযোগ ছিল, এক খাদানের ক্যারিং অর্ডার (সিও) দিয়ে অন্য খাদানে বালি তোলা হচ্ছিল। পাশাপাশি নকল সিও ব্যবহার করে চলছিল বালি পাচার। দীর্ঘদিন ধরেই এরকম ঘটনা ঘটছে।
সূত্র মারফত খবর পেয়ে গত মে মাসে চারটি বালিবোঝাই লরি বাজেয়াপ্ত করে নয়াগ্রাম থানার পুলিশ। সেখানে দুটি লরির চালক ছিল অমরজিৎ ও দুঃখীরাম। এদিন গোপীবল্লভপুরে চোরমুন্ডি ও আঠাঙ্গী এলাকায় ইডির টিম অভিযান চালায়। তবে সূ্ত্রের খবর, শেখ জাহিরুল আলির বাড়ি থেকে লক্ষাধিক টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ইডির পক্ষ থেকে কোনও বিবৃতি পাওয়া যায়নি।
জাহিরুল আলি আগে সাইকেল মিস্ত্রি ছিলেন। পরে তিনি ভিলেজ পুলিশে চাকরি পান। সেই চাকরি ছেড়ে বালি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। এদিন সোমবার সকালেই তার বাড়িতে হানা দিয়ে লক্ষাধিক টাকা উদ্ধার করেছে ইডির আধিকারিকরা। জানা গিয়েছে, এলাকায় যথেষ্ট দাপট রয়েছে জাহিরুলের। কোনও পদে না থেকেও পদধিকারিদের সঙ্গে ওঠাবসা করতেন তিনি। কুঁড়ে ঘর থেকে আজ তিন তলা বাড়ির মালিক হন। এহেন দাপুটে লোকের বাড়িতে সাত সকালে ইডির হানায় অবাক গ্রামের মানুষ।
স্থানীয় একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, জাহিরুলরা তিন ভাই। বড় দাদা কেন্দ্রীয় বাহিনীতে চাকরিরত অবস্থায় মারা যান। সেই চাকরি পান তাঁর ছোটো ভাই। জাহিরুল একটি টিনের শেড দেওয়া সাইকেলের দোকানে যন্ত্রাংশ সারাইয়ের কাজ করতেন। পুলিশের কাজ বালির টাকার কাছে তুচ্ছ ছিল। তাই ২০১৪ সালে ভিলেজ পুলিশের চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি বালি ব্যবসায় যুক্ত হয় তিনি। কলকাতার একটি বালি মাইন সংস্থার (জিডি মাইনস) সঙ্গে বালি খাদানগুলিতে শেয়ার নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। এরপর থেকে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হতে থাকেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনি সন্ধ্যার পরই বাড়ি থেকে ব্যবসার জন্য বেড়িয়ে যেতেন। কলকাতার ওই সংস্থার সঙ্গে মোটা টাকার লেনদেনের বিষয়টি ইডির নজরে আসে। এরপরই তাঁর ঝাড়গ্রামের বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। তাঁর এই ব্যবসার সঙ্গে আরও অনেকেই জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, এক পুলিশকর্মীকে গাড়ি কিনে উপহার দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন জাহিরুল। বিপুল অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা ছিল তাঁর। এই বিষয়ে গোপীবল্লভপুর এক ব্লক তৃণমূলের সভাপতি হেমন্ত ঘোষ বলেন, ‘জাহিরুল দলের কোনও পদে ছিলেন না। তিনি তৃণমূলের সমর্থক। ২০১৪ সাল থেকে অনেকের মতো তিনিও শেয়ারে বালি ব্যবসা করতেন।’
ঝাড়গ্রাম জেলা সিপিএম সম্পাদক প্রদীপ কুমার সরকার বলেন, ‘ইডির এই ধরনের অভিযান আরও বেশি করে এবং নিয়মিত হওয়া প্রয়োজন।’ বালি পাচার মামলায় রাজ্যের অন্তত ২২টি জায়গায় হানা দিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। কলকাতা, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনার বেশ কয়েকটি ঠিকানায় সোমবার ভোরে তল্লাশি চালান তদন্তকারীরা।