• জেলা কমিটিতে শমীক-শুভেন্দু অনুগামীরা কোণঠাসা, ক্ষোভ
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • পশ্চিম মেদিনীপুর বিজেপির ২৫ জনের জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই জেলা কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই জেলা বিজেপিতে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে। এই কমিটিতে জায়গা হয়নি রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের অনুগামী কয়েকজন পুরনো দলীয় কর্মীর। রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী কয়েক জন নেতারও নাম বাদ পড়েছে। এই কমিটিতে দিলীপ ঘোষ অনুগামী নেতাদেরই দাপট বেশি।

    শমিত মণ্ডল মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হওয়ার পরে মেদিনীপুর জেলা কার্যালয়ে দায়িত্বভার গ্রহণ করতে গিয়েছিলেন। তাঁকে অফিসে ঢুকতে দেওয়া তো দূরের কথা, গাড়ি থেকে নামতেও দেননি বিজেপি কর্মী সমর্থকেরা। খড়্গপুরে বসেই জেলায় দল পরিচালনার কাজ করেন শমিত। জেলা কমিটি গঠনে সেই ঘটনার ছাপ পড়েছে। অভিযোগ, জেলা পদাধিকারীদের বিভিন্ন মণ্ডল থেকে নেওয়া হয়নি। বিশেষ কয়েকটি মণ্ডল থেকেই নেওয়া হয়েছে। যেমন— এগরা বিধানসভা থেকে মমতা মাইতিকে সাধারণ সম্পাদক ও স্বরুপ দাসকে সহ-সভাপতি করা হয়েছে । এদের দুজনই এগরা ১ নং মন্ডলের বাসিন্দা । এই মণ্ডল এগরা ১ ব্লকের অন্তর্ভুক্ত। এগরা ২ ব্লক ও এগরা পৌরসভা এলাকা থেকে কাউকে নেওয়া হয়নি।

    দাঁতন বিধানসভার বিশ্বজিৎ পাত্র ও শান্তনু রায়কে জেলা কমিটির সম্পাদক করা হয়েছে। এরা দুজন দাঁতন ৩ মন্ডলের একটিই শক্তিকেন্দ্র থেকে এসেছেন। বাকি ৩ টি মণ্ডল থেকে কাউকে নেওয়া হয়নি। মোহনপুর ব্লক, দাঁতন ২ ব্লকের থেকে অনেক শক্তিশালী হলেও এখান থেকে কাউকেই নেওয়া হয়নি। নারায়ণগড় বিধানসভার শমিত মণ্ডল সভাপতি ও দেবগোপাল বেরা সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। এদের দুজনেই নারায়ণগড় ১ নং মণ্ডলের বাসিন্দা কিন্তু দুজনের কেউই নারায়ণগড়ে থাকেন না। দুজনেই খড়্গপুরে থাকেন। বিগত পঞ্চায়েত ভোটে এলাকার ৯২টি বুথের মধ্যে ১টি বুথ জিতেছিল বিজেপি আর ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে এই মন্ডল বিজেপি হেরেছে ১১ হাজার ভোটে।

    নারায়ণগড় দু’নম্বর মণ্ডলে দুটি থানা, বিডিও অফিস, সমস্ত রকম প্রশাসনিক দপ্তর থাকলেও এখান থেকে কাউকে জেলা কমিটিতে নেওয়া হয়নি, অথচ এই মন্ডলেই জেলার প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক গৌরীশংকর অধিকারী ও জেলার প্রাক্তন সহ সভাপতি, গত বিধানসভার প্রার্থী রমাপ্রসাদ গিরি থাকেন। গৌরীশংকর শমীকের অনুগামী, অন্যদিকে রমা শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। মেদিনীপুর বিধানসভা এলাকা থেকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জেলা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত শুভজিৎ রায় ও চন্দন ঘোষ, সহ-সভাপতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত শঙ্কর গুছাইত ও শুভেন্দু সেন এবং সম্পাদক হিসেবে শম্পা মণ্ডল প্রত্যেকেই মেদিনীপুর ১ নম্বর মণ্ডলের অন্তর্গত এলাকার বাসিন্দা।

    মেদিনীপুর সদর ব্লকের দুটি মণ্ডল ও মেদিনীপুর পৌরসভার একটি মণ্ডল থেকে কোনো প্রতিনিধিকে জেলা কমিটিতে নেওয়া হয়নি। খড়গপুর সদর বিধানসভা এলাকা থেকে সহ-সভাপতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত অভিষেক আগরওয়াল, সম্পাদক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত উজ্জ্বলা সাহা ও মনোজ দে, এই তিনজনই খড়গপুর ১ নং মন্ডলের বাসিন্দা। জেলা কমিটির অন্যতম সম্পাদক ওম প্রকাশ অন্য মণ্ডলের ভোটার হলেও খড়গপুর শহর এক নং মন্ডলেই স্থায়ী ভাবে বসবাস করেন।

    বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, জেলা কমিটি তৈরি করার সময় আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে শমীক এবং শুভেন্দু অনুগামীদেরও সচেতনভাবে কোনঠাসা করে রাখা হয়েছে। শমীকের অনুগামী দলের পুরনো দিনের কর্মী বাবলু বরম, সোমনাথ সিনহা,অরূপ দাসরা জেলা কমিটিতে স্থান পাননি। অন্যদিকে শুভেন্দুর অনুগামী বলে পরিচিত রমাপ্রসাদ গিরিরা ব্রাত্য থেকে গিয়েছেন।

    সংগঠন দেখার দায়িত্বভার যাদের কাঁধে সেই উমেশ রাই, মনোজ পান্ডে, সতীশ ধন্দ রাজ্যে ভুল তথ্য দিয়ে জেলা বিজেপির রাজনীতিকে দিলীপ ঘোষের কুক্ষিগত করে রাখতে সাহায্য করছেন। ফলে মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলায় দল ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে, এমনটাই মনে করছেন বিজেপির বিক্ষুব্ধ অংশ। বিক্ষুব্ধদের এই দাবি মানতে নারাজ মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি শমিত মণ্ডল। তিনি বলেন, ২৫ জনের কমিটিতে সবাইকে স্থান করে দেওয়া যায় না। বর্ধিত ৬৫ জনের কমিটিতে প্রত্যেক মণ্ডল থেকেই সদস্যদের নেওয়া হয়েছে। কোনো নেতার অনুগামী হিসেবে কোনো বাছ বিচার করা হয়নি।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)