• মানবিকতাই সব! সাহায্যের হাত বাড়াল বিএসএফ, মৃত মায়ের মুখ দেখলেন বাংলাদেশবাসী মেয়ে
    প্রতিদিন | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সঞ্জিত ঘোষ, নদিয়া: মানবিকতার ঊর্ধ্বে কিছু নয়! দেশের সীমান্তেও তৈরি হল মানবিকতার এক অনন্য নজির। বর্তমান ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অবনতির আবহেও মৃত মায়ের মুখটা শেষবার দেখতে পারলেন ওপারে বসবাসরত মেয়ে। সীমান্তে এক ‘অন্য ছবি’ তুলে ধরলেন বিজিবি এবং বিএসএফ। তৈরি হল মানবতার এক অন্যন্য দৃষ্টান্ত। ইউনূস সরকারের আমলে একাধিক ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব পড়েছে, অনেক ক্ষেত্রেও সীমান্তেও পড়েছে সেই প্রভাব। আর এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে বসবাসকারী মেয়ে ভাবছিলেন ভারতে বসবাসকারী মৃত মায়ের মুখটা একবার হলেও দেখা যাবে তো? অনিশ্চিয়তায় ভুগছিলেন। কিন্তু শেষ কথা বলল মানবিকতাই!

    সীমান্তের শূন্যরেখায় মায়ের মৃতদেহ নিয়ে গেল বিএসএফ। শেষবারের মতো মুখ দেখার সুযোগ পেলেন মেয়ে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর সৌজন্যে এক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক এবং মানবিক সহানুভূতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তৈরি হল ভারত এবং বাংলাদেশ সীমান্তে। কিন্তু কীভাবে অসম্ভব সম্ভব হল? নদিয়া জেলার হৃদয়পুর গ্রামের বাসিন্দা বছর ৬৫ এর জাহানারা বেগম দীর্ঘ সময় ধরে অসুস্থ ছিলেন। গত শুক্রবার নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জাহানারা বেগমের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে।

    তাঁদের মধ্যে এক মেয়ের বিয়ে হয় বাংলাদেশের চুয়াডাঙা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার আনন্দবাস গ্রামে। আপাতত সে দেশেরই স্থায়ী বাসিন্দা তিনি। মায়ের মৃত্যুর খবর পৌঁছয় তাঁর কাছেও। দূরদেশে বসে মায়ের মৃত্যুতে বিচলিত হয়ে পড়েন মেয়ে। একেবারের জন্যেও শেষ দেখা যাবে না! এরপরই এই বিষয়ে বাংলাদেশের চুয়াডাঙা ব্যাটালিয়ন (৬ বিজিবি) এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মৃত মায়ের মুখটা একবার দেখতে পাওয়ার সুযোগ যাতে করেদ দেওয়া হয়, সেই আবেদন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে জানান।

    জানা যায়, এরপরেই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিজিবি। আবেদন মানবিক দিক থেকে দেখে বিএসএফও! এরপর গত শনিবার অর্থাৎ ৬ সেপ্টেম্বর সকালে ভারত এবং বাংলাদেশ সীমান্তের মেইন পিলার ১০৫-এর কাছে শূন্যরেখায় জাহানারা বেগমের মরদেহ আনা হয়। ওপার বাংলা থেকে আসেন মেয়েও। বিএসএফ এবং বিজিবির নিরাপত্তা ঘেরাটোপ। এর মধ্যে সীমান্তে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। মৃত মাকে জড়িয়ে একেবারে কান্নায় ভেঙে পড়লেন মেয়ে। গুলির শব্দ নয়, এক ‘বিরল ছবি’ দেখার সাক্ষী থাকল ভারত এবং বাংলাদেশের মানুষ।

    আর তা করে দেখার জন্য বিএসএফকে কুর্নিশ জানিয়েছেন এপার বাংলার মানুষ। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর অবদানের কথা মেনে নিয়েছেন বিজিবিও। চুয়াডাঙা ব্যাটালিয়ন (৬ বিজিবি)’র এক কর্তা কর্নেল নাজমুল হাসান জানিয়েছেন, ”এই ধরনের মানবিক কার্যক্রম শুধু দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করে না, বরং সীমান্তবর্তী সাধারণ মানুষের মধ্যেও আস্থা তৈরি করে।” শুধু তাই নয়, বিএসএফকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জাহানারা বেগমের মেয়েও। তিনি বলেন, ”বিএসএফ যে কতটা মানবিক তার প্রমাণ মিলল।” এজন্য বিএসএফকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন।
  • Link to this news (প্রতিদিন)