আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধস পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার হিমাচল প্রদেশ সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মাণ্ডি ও কুলু জেলার বিপর্যস্ত এলাকাগুলি আকাশপথে পরিদর্শনের পর তিনি কাংড়ায় পৌঁছন। সেখানে গাগ্গাল বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান রাজ্যের রাজ্যপাল শিব প্রতাপ শুক্লা, মুখ্যমন্ত্রী সুকভিন্দর সিং সুখু এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী মুকেশ অগ্নিহোত্রী। উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলনেতা জয় রাম ঠাকুর, প্রদেশ বিজেপি সভাপতি রাজীব বিন্দল এবং অন্যান্য বিজেপি বিধায়করাও। প্রধানমন্ত্রী মোদি রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য সরকারের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে বসেল দুর্যোগ পরিস্থিতি নিয়ে প্রেজেন্টেশন দেখার জন্য। সেখানে তাঁকে জানানো হয়, ভারী বর্ষণে সৃষ্ট ক্লাউডবার্স্ট, আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে রাজ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০ জুন থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিজনিত বিপর্যয়ে হিমাচল প্রদেশে প্রায় ৪১২২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এসময়ে প্রাণ হারিয়েছেন মোট ৩৭০ জন। এর মধ্যে ২০৫ জনের মৃত্যু সরাসরি বৃষ্টি-জনিত কারণে—ভূমিধসে ৪৩ জন, ক্লাউডবার্স্টে ১৭ জন এবং আকস্মিক বন্যায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও ৪১ জন নিখোঁজ রয়েছেন। অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৬৫ জন। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত রাজ্যে ৬১৯টি রাস্তা বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও ১৭৪৮টি পাওয়ার ট্রান্সফর্মার এবং ৪৬১টি পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উল্লেখ্য, সোমবার গভীর রাতে, কুলুর নির্মান্ড এলাকার শারমানি গ্রামে রাত প্রায় ১টা ৩০ মিনিটে ভয়াবহ ভূমিধসের ফলে দুটি বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে যায়। ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বারের্তি দেবী নামে এক মহিলার মরদেহ। তিনি শিব রাম নামে এক ব্যক্তিকর স্ত্রী।
বর্তমানে নিখোঁজ রয়েছেন পরিবারের আরও চার সদস্য চুননী লাল, অঞ্জু, জাগ্রতী ও পুপেশ। তাদের উদ্ধারের জন্য পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তৎপরতা শুরু হয়েছে। ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন তিনজন। জানা গিয়েছে, ধর্মদাস, তাঁর স্ত্রী কালা দেবী এবং শিব রাম নামে তিনজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয়রা জানান, শিব রাম উঠোনে ঘুমিয়ে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান, তবে গুরুতর আহত হন। তিনজনকেই তড়িঘড়ি করে স্থানীয় নির্মান্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ভোগা রাম জানান, রাত প্রায় দুটোর সময় গ্রামবাসীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে এবং তৎক্ষণাৎ প্রশাসনকে খবর দেওয়া হয়।
বর্তমানে গ্রামবাসী ও প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নিখোঁজদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, প্রবল বর্ষণের ফলে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে হিমাচল প্রদেশের একাধিক এলাকায় ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। বহু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারীদের সতর্ক থাকতে এবং রাতের বেলা যাতায়াত এড়াতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগেই কুলুতে এক বিশাল ভূমিধসে অন্তত সাতজন কাশ্মীরি শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটে। ঘটনায় জখম হন আরও কয়েকজন। কুলুর দুর্গম এলাকায় উদ্ধারকাজ চালায় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) ও স্থানীয় প্রশাসন। ভূমিধসে দুটি বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। দুর্গম ভূখণ্ড ও অবিরাম ধসকবলিত মাটি উদ্ধারকার্যের বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। নিহতরা সকলেই কাশ্মীরের বাসিন্দা বলে জানা যায়।