• শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশের পর নেপাল, গণ-অভ্যুত্থান না কাঠমান্ডুতে কাঠপুতুল?...
    আজকাল | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: দীর্ঘদিন ধরে জনতার মনে জমতে থাকা ক্ষোভে হঠাৎ করে এসে পড়ে এক আগুনের ফুলকি। সেই ফুলকি হয় সরকারের কোনও আকস্মিক সিদ্ধান্ত কিংবা এমন কোনও পদক্ষেপ যা সমাজের একাংশের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তারপরেই বিস্ফোরণ! হঠাৎ করেই পথে নেমে আসে সাধারণ মানুষের একটি চরমপন্থী অংশ। আক্রমণ হয় একের পর এক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে। পার্লামেন্ট থেকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন বিদ্রোহের আগুনে ভস্মীভূত হতে হতে ভেঙে পড়ে সরকার।

    এটা কোন দেশের কথা বলা হল? নেপাল? নাকি বছর খানেক আগের বাংলাদেশ? নাকি তারও আগের শ্রীলঙ্কা? নাকি সবকটিই? উত্তর খুঁজছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও। আসলে ভারতের প্রতিবেশী এই দেশগুলিতে সাম্প্রতিক কালে যেন সরকার পরিবর্তন হচ্ছে কিছুটা একই কায়দায়। ঠিক যেমনটা হত ঠান্ডা যুদ্ধ বা কোল্ড ওয়ারের সময়। হঠাৎ সোভিয়েত বনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রসঙ্গ কেন? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দক্ষিণ এশিয়ার একের পর এক দেশে এভাবে একই কায়দায় সরকার উল্টে যাওয়া কোনও কাকতালীয় ঘটনা নয়। বরং একটি প্যাটার্ন। আর সেই প্যাটার্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গন্ধ।

    সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ৯০ এর দশক থেকে বিশ্বে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। বিশ্লেষকদের ভাষায় যাকে বলে ইউনিপোলার ওয়ার্ল্ড। কিন্তু শেষ এক দশকে অর্থনীতি এবং ভূরাজনীতির ক্ষেত্রে অনেকটাই আধিপত্য কমেছে আমেরিকার। বিকল্প শক্তি হিসাবে উঠে এসেছে চিন এবং ভারত। নতুন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টক্কর দিতে কোমর কষেছে রাশিয়াও। ব্রিকস থেকে সাংহাই সমবায়, একাধিক জায়গায় এক জায়গায় দেখা গিয়েছে এই দেশগুলির রাষ্ট্র নেতাদের। আর এখানেই যেন কোথাও ফিরে আসছে সেই ঠান্ডা যুদ্ধের ছায়া।

    কেউ কেউ বিষয়টিকে ‘কন্সপিরেসি থিওরি’ বলে উড়িয়ে দিতে পারেন। আবার কারও চোখে বিষয়টি ইঙ্গিতবাহী। পাকিস্তানের কথাই ধরা যাক। গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে কোনও দিনই বিশেষ সুখ্যাতি ছিল না তাঁদের। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা নিয়ে সংশয় ছিল না কারও মনেই। কিন্তু সেই ইমরান মার্কিন ছায়া থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতেই জেলবন্দি হলেন তিনি। ক্ষমতা দখল করল সামরিক বাহিনীর তোতাপাখি সরকার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা থেকে হোয়াইট হাউসে নিমন্ত্রণ, পাক সেনাপ্রধানের সঙ্গে আমেরিকার সেনাকর্তাদের মহরম দেখার মতো

    সেন্ট মার্টিন দ্বীপে মার্কিন নৌঘাঁটি তৈরি না করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘিরে হাসিনা সরকারের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিবাদ এখন আর কারও অজানা নেই। ঠিক তারপরই আচমকা কোটা আন্দোলনের সূত্রপাত। হাসিনার পতন। মার্কিন মুলুক থেকে উড়ে এসে শাসকের কুর্সি দখল মহম্মদ ইউনূসের।

    এবার নেপালেও যেন ঠিক একই চিত্রনাট্য। দিন কয়েক আগেই সাংহাই সমবায়ের মিটিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছিল নেপালের প্রধানমন্ত্রী ওলিকে। তার পর এক পক্ষকালও কাটেনি। উত্তাল নেপাল। ঠিক বাংলাদেশের কায়দায় একের পর এক গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা মন্ত্রীদের উপর আক্রমণ, পার্লামেন্টে আগুন লাগিয়ে দেওয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ। বিদ্রোহী জনতার একাংশের দাবি প্রধানমন্ত্রী করতে হবে কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন্দ্র শাহকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এই বালেন্দ্র কিছুদিন আগেই ঘুরে এসেছিলেন মার্কিন কনস্যুলেট। কথা বলে এসেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও। কিছুদিন ধরেই একাধিক মার্কিন সংবাদমাধ্যমে ঢালাও প্রশংসা করা হচ্ছিল তাঁর। আর নেপালের আন্দোলন শুরু হতেই বিদ্রোহী জনতার পক্ষে দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি। আর দেখতে দেখতেই হাতের বাইরে চলে যায় কাঠমান্ডুর পরিস্থিতি। সব দেখেশুনে দুইয়ে দুইয়ে চার করছেন বহু রাজনৈতিক বিশ্লেষক। শান্ত নেপালের অশান্ত হয়ে ওঠার কারণ কি সত্যিই ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম ব্যান নাকি, নেপথ্যে কোনও ধূর্ত দাবাড়ুর অভিজ্ঞ চাল? প্রশ্নটা সহজ, উত্তরও তো জানা।
  • Link to this news (আজকাল)