শুধু মোদি-ক্যারিশমা, বিকশিত ভারতের স্বপ্ন, হিন্দুরাষ্ট্রের পদধ্বনি, মন্দির-মসজিদের লাভ যে আর নির্বাচনী ময়দানে তোলা যাচ্ছে না, সেটা বুঝে গিয়েছে কেন্দ্র। আর তাই সরাসরি মানুষের কাছে আর্থিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়া শুরু করেছে মোদি সরকার। তাই ১০ বছরে প্রথমবার আয়করে বড়সড় ছাড় মিলেছে। মধ্যবিত্তকে খুশি করতে। ৮ বছর ধরে উচ্চহারে জিএসটি আদায় করে রাজকোষ ভরানোর পর অবশেষে জিএসটির হার কমেছে। নিজেদের জনদরদী ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে। এবার আসছে বিহার নির্বাচন। ভোট চুরি নিয়ে বিরোধীদের ‘অপবাদে’র পাল্টা প্রচার যথেষ্ট হচ্ছে না বলেই মনে করছে শাসকের শীর্ষমহল। বিশেষত আশঙ্কা ধরিয়েছে রাহুল গান্ধী-তেজস্বী যাদবদের ভোটার অধিকার যাত্রায় উপচে পড়া ভিড়। তাহলে উপায়? একটাই—আর্থিক সুরাহা। সেই সুযোগ এনে দিচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই অপরিশোধিত তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমতে শুরু করবে। প্রবণতা বলছে, ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৬৫ ডলার থেকে ৬০ ডলারে নেমে আসতে পারে। এমনকী একধিক সমীক্ষক সংস্থার অনুমান, এই দাম ৫৫ ডলারে নেমে গেলেও অস্বাভাবিক হবে না। আর তাই বিহার ভোটের চমক হতে পারে পেট্রল-ডিজেলের দাম কমানোর ঘোষণা। সরকারের অন্দরে সেই তৎপরতা তুঙ্গে।
২০১৫ সালের পর ব্যারেল প্রতি অশোধিত তেলের দাম ৫৫ ডলার কখনওই হয়নি। শেষবার ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে এই তেলের দাম ছিল ৫৬ ডলার। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। ভারতেও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পেট্রলের দাম। তবে ব্যারেল পিছু ১১০ ডলারে পৌঁছনোর সময়ও দেশের বাজারে পেট্রল-ডিজেলের যা দাম ছিল, আন্তর্জাতিক বাজারে তা অর্ধেক হয়ে যাওয়ার পরও তার সুরাহা কিন্তু পায়নি আম জনতা। ব্রেন্টের তুলনায় কম দামে রাশিয়া থেকে তেল কিনেছে ভারত। তারপরও নয়।
অর্গানাইজেশন অব পেট্রলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক) তাদের তেল উৎপাদন বাড়িয়ে দেবে বলে ঠিক করেছে। ২০২৩ সালে এই তেল উৎপাদনকারী রাষ্ট্রগোষ্ঠী উৎপাদন কমানোর কথা ঘোষণা করেছিল। সেই সুযোগেই বিগত কয়েক বছরে আমেরিকা, ব্রাজিল, রাশিয়া অনেক বেশি ব্যবসা করে নিয়েছে। পিছিয়ে পড়েছে ওপেক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি। এই গোষ্ঠী বিশ্বের ৪০ শতাংশ তেল উৎপাদন করে। ইরান, ইরাক, কুয়েত, সৌদি আরব, ভেনিজুয়েলা সহ মোট ১২টি রাষ্ট্র ওপেক গোষ্ঠীর সদস্য। এবার তারা জানিয়েছে, প্রতিদিন ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ব্যারেল উৎপাদন বাড়িয়ে দেবে তারা। আমেরিকাও কিন্তু তেল উৎপাদন বাড়িয়েছে। অর্থাৎ, চাহিদার তুলনায় আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই তেলের সাপ্লাই বিপুল হতে চলেছে। এস অ্যান্ড পি গ্লোবাল সমীক্ষক সংস্থা জানিয়েছে, সেই কারণেই আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম কমবে। হয়তো ব্যারেল প্রতি ৫৫ ডলারে। এই সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে মোদি সরকার বিহার ভোটের মুখে দেশজুড়ে পেট্রল-ডিজেলের দাম কমিয়ে দেওয়ার কথা ভেবেছে। একদিকে আয়করে ছাড়, তারপর জিএসটি হ্রাস এবং অবশেষে পেট্রপণ্যে সুরাহার উদ্যোগ। মোদি ম্যাজিকে আর আস্থা নেই, এবার ভোট উপহারই ভরসা!