• বালিতে নজর ইডির, কাঁপছে ফুলেফেঁপে ওঠা কারবারিরা
    বর্তমান | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: অবৈধভাবে বালির ব্যবসা করে পূর্ব বর্ধমানেরও অনেকেই রাতারাতি ফুলেফেঁপে উঠেছে। গলসি, রায়না, খণ্ডঘোষ জামালপুর, আউশগ্রাম ও মঙ্গলকোট এলাকায় কয়েকজনের উত্থান রীতিমতো চমকপ্রদ। একই ছবি কেতুগ্রাম ও কাটোয়াতেও। কয়েকজন কারবারির বাড়ি এলাকায় দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। বাড়ি না থ্রি স্টার হোটেল, তা বোঝা দায়। কয়েক বছর আগেও যারা বাইক চালাত তারা এখন গ্রামের রাস্তায় কালো কাচ দেওয়া দামি গাড়ি চড়েন। অবৈধ বালির কারবার নিয়ে ইডি তৎপর হতেই এই সমস্ত কারবারিদের বুকে কম্পন ধরে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কয়েক বছর আগেও তাদের কেউ দোকানে কাজ করত, কারও আবার ছোটখাট ব্যবসা ছিল। অবৈধ কারবারের দৌলতে তারা এখন ‘শিল্পপতি’।

    কেন্দ্রীয় সংস্থা নকল ই-চালান নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমান জেলাতেও আড়াই বছর আগে পোর্টাল হ্যাক করে ই-চালান তৈরি করা হয়েছিল। নকল চালান দেখিয়ে রমরমিয়ে ব্যবসা চলে। পরে প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে। গলসির এক কারবারির অফিস এবং বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। পুলিশ সেখান থেকে বেশ কিছু  নথি ও ডিভাইস উদ্ধার করেছিল। কয়েকজনের নামে অভিযোগও করা হয়। তারপর থেকে অবৈধ কারবারের কিছুটা রাশ টানা হয়। কিন্তু, ততদিনে মাফিয়ারা কয়েক কোটি টাকার লেনদেন করে নিয়েছিল বলে অভিযোগ। এক আধিকারিক বলেন, নকল চালান তৈরির অভিযোগে কয়েক মাস আগেও কলকাতা থেকে গলসি থানার পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। চক্রটি মাঝেমধ্যেই বিভিন্নভাবে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করে। এই কারবার করে অনেকেই বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়ে উঠেছে। সেই কারণে ইডি ময়দানে নামতেই তাদের রাতের ঘুম চলে গিয়েছে।

    জেলার বাসিন্দারা বলেন, এবছর প্রশাসন প্রথম থেকেই কড়া মনোভাব নিয়েছিল। সেই কারণে অবৈধ বালিঘাটে রমরমা এবার কেমন দেখা যায়নি। মাফিয়ারা কিছুটা হলেও বিপাকে পড়ে। নকল চালান তৈরি করেও তারা ফায়দা তুলতে পারেনি। এক আধিকারিক বলেন, প্রতিটি ব্লকেই এবার প্রথম থেকেই নজরদারি চালানো হয়েছিল। বৈধ চালান ভালোভাবে পরীক্ষা করা হয়। তারপরও মাফিয়ারা কোথাও অবৈধভাবে বালি তোলার চেষ্টা করলে অভিযান চালানো হয়েছে। তবে আগে অবৈধ কারবার করে অনেকের আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গিয়েছে। গলসি, মঙ্গলকোট, জামালপুর খণ্ডঘোষে এমন দৃষ্টান্ত অনেকেই রয়েছে। শুধু ঝাঁ চকচকে বাড়ি বা দামি গাড়ি নয়, বিভিন্ন বেসরকারি  প্রতিষ্ঠানেরও তারা মালিক হয়ে উঠেছে। 

    গলসির এক বাসিন্দা বলেন, ইডি অবৈধ বালির কারবার নিয়ে ময়দানে নামবে এমনটা অনেকেই ভাবতে পারেনি। আচমকা অভিযান শুরু হওয়ায় তারা সব শুকিয়ে গিয়েছে। অনেকেই হিসেব রক্ষকের কাছে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছে। তবে ইডি এই জেলাতেও তদন্ত শুরু করলে অনেকের রাতের ঘুম চলে যাবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। তবে জেলায় যাঁরা বৈধভাবে ব্যবসা করেছেন, তাঁরা নিশ্চিন্তে রয়েছেন। বহু ব্যবসায়ী নিয়ম মেনেই বালির কারবার করেন। তাঁদের সমস্যা নেই।
  • Link to this news (বর্তমান)