রোগী রেফারে অশুভ আঁতাত, ভাতারে ডাক্তারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু
বর্তমান | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুঃস্থ পরিবারগুলির কথা ভেবে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেছেন। ব্লক এবং গ্রামীণ হাসপাতালগুলির ভোল বদলে দিয়েছেন। কিন্তু এত কিছু করার পরেও রোগীদের পকেট ফাঁকা হচ্ছে। একশ্রেণির চিকিৎসক হাসপাতালে বসেই রমরমিয়ে ব্যবসা করছেন। সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগীদের নার্সিংহোমে রেফার করে তাঁরা মোটা টাকা কমিশন পাচ্ছেন। অনেক চিকিৎসক টাকার লোভে সরকারি হাসপাতালে অপারেশন না করে নার্সিংহোমে করছেন। এমনই দাবি জেলার বাসিন্দাদের। সোমবার ‘বর্তমান’ পত্রিকায় ভাতার গ্রামীণ হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কীর্তি তুলে ধরার পরই প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়রাম হেমব্রম পুরো ঘটনার তদন্তের জন্য ভাতারের বিএমওএইচকে চিঠি করেছেন। কমিটি গঠন করে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাঁচদিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, রিপোর্ট হাতে আসার পরেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।
ভাতার গ্রামীণ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮ বছরের এক যুবতী পেটে ব্যথা নিয়ে সোমবার চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন। শেখ ইউসুফ নামে এক চিকিৎসক ওই রোগিণীকে বর্ধমানের নবাবহাটের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হওয়ার ‘অ্যাডভাইস’ দেন। তা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। যদিও ভাতারের বাসিন্দাদের দাবি, এই ঘটনা প্রথম নয়। আগে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা অনেক রোগীকেই কাগজে নার্সিংহোমের নাম লিখে দেওয়া হতো। সেখানে চিকিৎসা করা ভালো বলে পরামর্শ দেওয়া হতো। টাকা খরচ করে রোগীরা নার্সিংহোমে চিকিৎসা করাতে বাধ্য হতেন। অভিযুক্ত চিকিৎসক অবশ্য সাদা কাগজে নয়, সরকারি নথিতেই নার্সিংহোমের নাম উল্লেখ করে দিয়েছেন। ওই চিকিৎসক অবশ্য বলেন, সরকারি নথিতে কী লেখা রয়েছে, তা দেখতে হবে। কে লিখেছে সেটাও জানি না।
ভাতারের বাসিন্দা তথা পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু কোনার বলেন, সরকারি হাসপাতালের একশ্রেণির চিকিৎসক বহুদিন ধরেই ব্যবসা শুরু করে দিয়েছেন। রোগীরা বাইরে কোথায় টেস্ট করাবেন, বা কোন ব্র্যান্ডের ওষুধ ব্যবহার করবেন, সেটাও তাঁরা বলে দিচ্ছেন। এটা কাম্য নয়। মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়েছেন। আর একশ্রেণির চিকিৎসকের জন্য পুরো ব্যবস্থাটাই কালিমালিপ্ত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সরকারি হাসপাতালের বহু চিকিৎসক খোসবাগান বা নবাবহাটের নার্সিংহোমে প্র্যাকটিস করেন। সেখানে কোনও রোগীর অপারেশন করতে পারলে, তাঁরা মোটা টাকা পান। সেই লোভে অনেকেই সরকারি হাসপাতালে ঠিকমতো চিকিৎসা করছেন না।
স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্র জানা গিয়েছে, শুধু ভাতার গ্রামীণ হাসপাতাল নয়, অন্যান্য স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলির উপরও নজরদারি শুরু হয়েছে। সিন্ডিকেট ভাঙতে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আধিকারিকরা জানিয়েছেন। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েশা রানি এ বলেন, ভাতারের ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে বলা হয়েছে। অভিযুক্ত ডাক্তারের রেফার করার নথি।