টেলিগ্রাম গ্রুপ থেকে উপার্জনের টোপ, বধূ খোয়ালেন ১ কোটি ৪ লক্ষ টাকা
বর্তমান | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: টেলিগ্রাম থেকে মোটা উপার্জনের টোপ দিয়ে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের পাতণ্ডা গ্রামের এক গৃহবধূর কাছ থেকে ১ কোটি ৪ লক্ষ টাকা হাতাল সাইবার অপরাধীরা। মঙ্গলবার বিকেলে ওই গৃহবধূ তমলুক থানায় এফআইআর করেন। প্রতারণার অঙ্ক শুনে চোখ কপালে উঠে যায় পুলিশ অফিসারদের। অভিযোগ জমা করে তদন্ত শুরু হয়েছে। কোটি টাকা খোয়ানোয় গৃহবধূর বাড়িতে অশান্তি বেধেছে। তমলুক থানার আইসি সুভাষচন্দ্র ঘোষ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে।
এদিন থানায় এসে বিধ্বস্ত অবস্থায় ওই গৃহবধূ বলেন, আমি এবং আমার স্বামী দু’জনেই মাছের ভেড়ির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। ফোনে নোটিফিকেশন আসার পর তাতে সাড়া দিতেই আমাকে একটি টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত করে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে টাস্ক দেওয়া হতো। আমি সেইসব টাস্ক সারতাম। শুরুতে অ্যাকাউন্টে হাজার টাকা করে পাঠানো হচ্ছিল। তাতে আস্থা তৈরি হয়েছিল। মাত্র ১০দিনে আমার অ্যাকাউন্টে থাকা ১ কোটি ৪ লক্ষ টাকা গায়েব হয়ে গিয়েছে। আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ি। থানার দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। তাই তমলুক থানায় এফআইআর করলাম।
জানা গিয়েছে, আগস্ট মাসে ওই গৃহবধূ মোবাইল নাড়াচাড়া করার সময় একটি নোটিফিকেশন পান। তাতে ‘আপনি কি চাকরি খুঁজছেন? ঘরে বসে রোজগারের সুযোগ নিন। আগ্রহী হলে ইয়েস ক্লিক করুন।’ এধরনের বার্তা ছিল। তাতে আগ্রহ দেখানোর পরই সাইবার প্রতারকরা টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত করে নেয়। সেই গ্রুপে জয়েন করার পরই টাস্ক আসতে শুরু করে। সেগুলি সম্পূর্ণ করার পর মোবাইল ওয়ালেটে ২০০টাকা পৌঁছে যায়। টাকা আসার পরই একটা আস্থার জায়গা তৈরি হয়। এরপরের টাস্ক সম্পূর্ণ করায় ৫০০টাকা চলে আসে। এরপর পেমেন্ট ডবল করার টোপ পান। ১০০০টাকা বিনিয়োগ করে টাস্ক সম্পূর্ণ করার পরও পেমেন্ট আটকে যায়। উল্টোদিক থেকে বিনিয়োগের নামে নানা রকম ব্ল্যাকমেল চলতে থাকে। একটা সময় বুদ্ধিসুদ্ধিও ঠিকমতো কাজ করে না। যেন প্রতারকরা মগজটাই ‘হ্যাক’ করে নিয়েছে। এভাবেই তাঁর অ্যাকাউন্টে জমা থাকা ১ কোটি ৪ লক্ষ টাকা গায়েব করতে প্রতারকরা মাত্র ১০দিন সময় নিয়েছে।
জানা গিয়েছে, ওই গৃহবধূ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভীষণ অ্যাক্টিভ থাকেন। ২৬আগস্ট তিনি একটি টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হন। ৫সেপ্টেম্বরের মধ্যেই অ্যাকাউন্ট ফাঁকা হয়ে যায়। কোটি টাকা খোয়ানোয় বাড়িতে অশান্তি হচ্ছে। তিনি বলেন, এভাবে প্রতারণার শিকার হব, ভাবতে পারিনি। পুলিশ আমাদের পাশে দাঁড়ালে খুবই উপকৃত হব। অন্য কেউ যাতে এধরনের প্রতারণার ফাঁদে পা না দেন, সকলের উদ্দেশে সেই বার্তা রাখতে চাই।
মঙ্গলবার বিকেলে ওই মামলা নথিভুক্ত হওয়ার পরই অ্যাকাউন্ট নম্বর শনাক্ত করার কাজ শুরু করেছে। এই কাজে প্রয়োজনে তমলুক সাইবার ক্রাইম থানার সহযোগিতা নেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। অনেক সময় দুবাই থেকেই এধরনের গ্রুপ তৈরি করে প্রতারণা করা হয়। তাই প্রতারণার জাল কতদূর বিস্তৃত রয়েছে, তা খুঁজে পেতে চাইছেন তদন্তকারী অফিসাররা।