• প্রেমের জালে নাবালিকা, পতিতালয়ে বিক্রি, দু’জনের যাবজ্জীবন সহ ৩ অভিযুক্তের কারাদণ্ড
    বর্তমান | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: নাবালিকাকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে শারীরিক সম্পর্কের পর পতিতালয়ে বিক্রি করার দায়ে এক যুবক ও পতিতালয়ের মালকিনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল আদালত। এছাড়া ওই পতিতালয়ের মালকিনের স্বামী পিতু রায়কে দু’বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের পকসো কোর্টের বিচারক সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের নাম শাজাহান চিত্রকর ও সায়রা বানু। তাদের দু’জনকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ছ’মাস সাজার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। গত ৪ সেপ্টেম্বর তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন বিচারক। মঙ্গলবার ওই মামলার সাজা ঘোষণা করেন।

    ওই মামলার স্পেশাল পিপি কিঙ্কর গায়েন বলেন, ২০১৫ সালের মামলা। নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে পুলিশ ওই মামলায় ভালো কাজ করেছিল। ঘটনার ১০ বছর পর তিনজনের সাজা ঘোষণা করলেন বিচারক। প্রধান দুই অপরাধীর যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। পাশাপাশি নির্যাতিতাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

    জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালে পাঁশকুড়া গ্রামীণের ১৭ বছরের ওই নাবালিকার সঙ্গে মিসড কলে এক যুবকের আলাপ হয়। ওই যুবক তার নাম সাদ্দাম বলে পরিচয় দিয়েছিল। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। এরপর একদিন দু’জনে বাইরে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। মেয়েটি মামার বাড়ি যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। পাঁশকুড়া পুরনো বাজারে তারা একসঙ্গে হয়ে মেচেদায় সিনেমা হলে যায়। এরপর ওই যুবক হলদিয়ায় অসুস্থ দিদিমাকে দেখতে যাওয়ার নাম করে ওই নাবালিকাকে বাসে তোলে। মহিষাদলে তাকে বাস থেকে নামিয়ে একটি ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে একটি ফাঁকা রুমে তারা শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। এরপর সাত হাজার টাকার বিনিময়ে ওই কিশোরীকে সায়রা বানুর কাছে বিক্রি করে দেয়। 

    জানা গিয়েছে, সাদ্দাম পরিচয় দেওয়া ওই যুবক সায়রা বানুর কাছ টাকা নিয়ে চলে যায়। মেয়েটিকে মারধর করে পতিতালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল। প্রায় ১৫দিন মেয়ে বাড়ি না ফেরায় তার বাবা পাঁশকুড়া থানায় মিসিং ডায়েরি করেন। যদিও পুলিস এনিয়ে কোনও ক্লু পাচ্ছিল না। পতিতালয়ে আটকে রাখার সময় মেয়েটি এক খদ্দেরকে তার মোবাইল থেকে কথা বলার জন্য রাজি করায়। এরপর ওই নাবালিকা তার বাবাকে ফোন করে মহিষাদলে জোর করে আটকে রেখে দেহ ব্যবসায় নামানোর কথা জানায়। 

    নাবালিকার বাবা সঙ্গে সঙ্গে পাঁশকুড়া থানায় যান। ওই থানার সাব ইন্সপেক্টর মানস চট্টোপাধ্যায় বাহিনী নিয়ে মহিষাদলে অভিযান চালিয়ে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করেন। গ্রেপ্তার করা হয় সায়রা বানু ও তার স্বামীকে। এরপরই ওই মামলায় অনৈতিক ট্রাফিক প্রিভেনশন অ্যাক্ট যুক্ত হয়। তমলুকের সার্কেল ইন্সপেক্টর দেবাশিস ঘোষ তদন্তকারী অফিসার হন। কিন্তু, সাদ্দামের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সায়রা বানুকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় জানা যায়, চণ্ডীপুরের শাজাহান চিত্রকর মেয়েটিকে তার কাছে বিক্রি করেছিল। তমলুকের মানিকতলায় তার শ্বশুরবাড়ি। প্রায় দু’বছর পর পুলিশ শাজাহানকে গ্রেপ্তার করে। 

    এরপর শাজাহান ও সাদ্দাম একই ব্যক্তি কি না তা জানার জন্য টিআই প্যারেড হয়। ওই নাবালিকা জানায়, সাদ্দাম নাম নিয়ে ওই যুবকই তাকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে পতিতালয়ে বিক্রি করে দিয়েছিল। আসলে তার নাম শাজাহান চিত্রকর। ওই যুবককে সংশোধনাগারে রেখেই বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। যদিও সায়রা ও তার স্বামী জামিনে মুক্ত ছিল।
  • Link to this news (বর্তমান)