মমতার ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্প ঘিরে জেলায় উচ্ছ্বাস, কাজ পেয়েছেন সাড়ে ৪ লক্ষ মানুষ
বর্তমান | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: হাইকোর্টে নির্দেশ সত্ত্বেও রাজ্যে একশো দিনের কাজ নিয়ে উৎসাহ দেখায়নি কেন্দ্রীয় সরকার। বরং তা পুনরায় আইনি জটিলতার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। কেন্দ্র সরকারের এই উদাসীনতার মধ্যেই, রাজ্যের বিকল্প কর্মশ্রী প্রকল্পে নজির গড়েছে। চলতি অর্থবছরে এখনও পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে ১৫ কোটি ৮৭ লক্ষ ১৩ হাজার ৮৩০ কর্মদিবস তৈরি হয়েছে। আর তাতে প্রথম সারিতে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর, নদীয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মতো জেলাগুলো। কাজ পেয়েছেন ৪৭ লক্ষ ৫০ হাজার ২০৯ জন শ্রমিক। তাঁরা গড়ে ৬৪ দিন করে কাজ করেছেন। এখনও পর্যন্ত শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৩৩ কোটি ৮৭ লক্ষ ৩৭ হাজার ১৯৫ টাকা।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কর্মদিবস তৈরির নিরিখে শীর্ষে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর। সেখানে ২ কোটি ২৭ লক্ষ ৬৪ হাজার ৮১১ কর্মদিবস তৈরি হয়েছে। কাজ পেয়েছেন ৬ লক্ষ ১১ হাজার ৬৮৯ জন। তাঁরা প্রত্যেকেই গড়ে ৫৫ দিন করে কাজ পেয়েছেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা নদীয়া জেলায় চলতি অর্থবর্ষে এখনও পর্যন্ত ২ কোটি ২৬ লক্ষ ৪৪ হাজার ২১১ কর্মদিবস তৈরি করা গিয়েছে। তাতে নদীয়া জেলার ২ লক্ষ ৯৪ হাজার ৮৪০টি পরিবারের ৪ লক্ষ ৫৬ হাজার ৩৬৬ জন গড়ে ৭৭ দিন করে কাজ পেয়েছেন। তৃতীয় স্থানে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা।
নদীয়ার জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদ জানিয়েছেন, কর্মশ্রী প্রকল্প গ্রামবাংলার অর্থনীতিকে নতুন গতি দিয়েছে। তাঁর কথায়, আমরা চেষ্টা করছি যাতে আরও বেশি সংখ্যক জব কার্ড হোল্ডার এই প্রকল্পে কাজ পান। বিভিন্ন দপ্তর যৌথভাবে কাজ করছে।
প্রসঙ্গত, একশো দিনের কাজের বকেয়া টাকা নিয়ে দিল্লির বিজেপি সরকার অনড় অবস্থান নিয়েছে। এই ইস্যুতে বিগত কয়েক বছর ধরে তৃণমূল সরকার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি হাইকোর্ট আগস্ট মাস থেকে ১০০ দিনের কাজ শুরু করার নির্দেশ দেয়। নির্দেশ মেনে জেলা প্রশাসনের তরফে দ্রুত প্রস্তুতি নেওয়া হয় এবং আধিকারিকদের দফায় দফায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তখন অনেকেই ধারণা করেছিলেন যে আগস্ট থেকেই রাজ্যজুড়ে ফের ১০০ দিনের কাজ শুরু হবে।
কিন্তু কেন্দ্র হাইকোর্টের সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে। এর ফলে বর্তমানে রাজ্যে ১০০ দিনের কাজ কার্যত স্থগিত রয়েছে। এই প্রকল্প এতদিন বহু পরিবারের অন্নসংস্থান এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।
এই পরিস্থিতিতে বিকল্প হিসেবে কর্মশ্রী প্রকল্প চালু করেছে রাজ্য সরকার। গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখা এবং সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর জন্য এই প্রকল্পে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে ১০০ দিনের পরিবর্তে গড়ে ৫০ দিনের কাজের ঘোষণা করেছিলেন। তবে বর্তমানে বিভিন্ন জেলায় কর্মদিবস বেড়ে গড়ে প্রায় ৮০ দিনে পৌঁছতে চলেছে।