• বন্ধ হবে দালালরাজ, দুর্ঘটনায় হতাহতের ক্ষতিপূরণে পোর্টাল
    বর্তমান | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • শুভ্র চট্টোপাধ্যায়  কলকাতা

    ক্ষতিপূরণের টাকা হাতে পেতে দুর্ঘটনায় আহত বা মৃতের পরিবারের জুতোর সুকতলা ক্ষয়ে যায়। আর তারপরও দ্বারস্থ হতে হয় দালাল চক্রের। তাদের হাতে একটা বড় অংশ ‘কাটমানি’ গুঁজে তারপর সুরাহা মেলে। এবার সেই দালালরাজই শেষ হতে চলেছে।  এ রাজ্যেও এবার পুরোদমে চালু হচ্ছে ইন্টিগ্রেটেড রোড অ্যাক্সিডেন্ট ডেটা বেস (আই রাড) ও ই-ডিটেইলড অ্যাক্সিডেন্ট রিপোর্ট পোর্টাল (ই-ডার)।  দুর্ঘটনার পরই রিয়েল টাইম সব ডেটা পোর্টালে আপলোড করে দেবে পুলিশ। ই-ডারে থাকা সেই তথ্য দেখে আহত বা নিহতের পরিবারের ক্ষতিপূরণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে আদালত। আর কারও ‘মধ্যস্থতা’ ছাড়াই সরাসরি দুর্ঘটনাগ্রস্ত পরিবার পেয়ে যাবেন প্রাপ্য টাকা। তাও আদালতের সাহায্যে।

    পথ দুর্ঘটনা কমাতে ও দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক ইন্টিগ্রেটেড রোড অ্যাক্সিডেন্ট ডেটা বেস পোর্টাল চালু করে। প্রতিটি রাজ্যকে দুর্ঘটনার খুঁটিনাটি তথ্য দিয়ে সেখানেই সবটা আপলোড করতে বলা হয়। পুলিশ, পরিবহণ, হাইওয়ে ও হাসপাতাল—এই চারটি স্তম্ভকে এই পোর্টালের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এদের প্রত্যেককেই পাঠাতে হবে রিয়েল টাইম তথ্য। এর সঙ্গে চালু হয় ই-ডিটেইলড অ্যাক্সিডেন্ট রিপোর্ট পোর্টাল। সেখানে দুর্ঘটনার সব রিয়েল টাইম তথ্য বিশদে আপলোড করার কথা বলা হয়েছে। এটি সরাসরি সংযুক্ত রয়েছে আদালতের সঙ্গে। 

    রাজ্য পুলিশ সূত্রে খবর, আই-রাড পোর্টাল তৈরির উদ্দেশ্যই হল দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ। অর্থাৎ বারবার একই জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটছে কি না। হলে সেখানে রাস্তায় কোনও ত্রুটি রয়েছে কি? কোন জাতীয় গাড়ি বারবার দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে? দুর্ঘটনার কোনও বিশেষ প্রবণতা এভাবে খোঁজাটাই উদ্দেশ্য সরকারের। তালিকায় পথচারীর গাফিলতিও রয়েছে। সবটাই বিশ্লেষণ করবেন আইআইটির বিশেষজ্ঞরা। তার ভিত্তিতে দুর্ঘটনা আটকাতে পদক্ষেপ ঠিক করা হবে। ই-ডার পোর্টালে আহত বা নিহতের তথ্যের পাশাপাশি বিমা কোম্পানির যাবতীয় নথি উল্লেখ করতে হবে রাজ্যগুলিকে। 

    রাজ্য পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, ‘এতদিন দুর্ঘটনার পর নিহত বা আহতের পরিবারের ক্ষতিপূরণ পেতে কালঘাম ছুটত। কোথায় গেলে ক্ষতিপূরণের টাকা মিলবে, তা জানেন না অনেকেই। এই অবস্থায় ক্লেম পাইয়ে দিতে রাজ্যে দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর মধ্যে রয়েছে এক শ্রেণির আইনজীবীও। আহত বা নিহতের নাম, ফোন নম্বর জোগাড় করে দালালরাই যোগাযোগ করে নিতেন। দালালদের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের টাকা মিললে ৬০ শতাংশ পেত পরিবার, আর ৪০ শতাংশ যেত দালালদের পকেটে। এমনকী দুর্ঘটনার ভুয়ো নথি জমা করে দালাল সহ বিভিন্ন সংস্থা টাকা তুলে নিচ্ছিল বলে অভিযোগ জমা পড়েছে। এই জালিয়াতি বন্ধ করতে শুধু দু’টি পোর্টালে তথ্য আপলোডই নয়, রিয়েল টাইমে দুর্ঘটনার জায়গা ও গা঩঩ড়ির ছবিও দিতে হবে। ই-ডারে আপলোড করা নথি আদালত দেখে নেবে পোর্টাল থেকে। তারপর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও বিমা কোম্পানিকে ডাকা হবে। আদালত দু’তরফের বক্তব্য শুনে টাকার পরিমাণ ঠিক করে দেবে। এরপর টাকা পৌঁছে যাবে নিহত বা আহতের পরিবারের কাছে।’  
  • Link to this news (বর্তমান)