• বেপরোয়া গতি, মৃত্যুফাঁদ বাসন্তী হাইওয়ে
    বর্তমান | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ৩০ দিনের মধ্যে চারটি দুর্ঘটনা। তার মধ্যে তিনটিতেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। দ্বিতীয় দুর্ঘটনায় আবার ‘অভিযুক্ত’ বিধায়কের কনভয়ের দায়িত্বে থাকা স্বয়ং কলকাতা পুলিশের পাইলট কার। বারবার দুর্ঘটনা ও তার জেরে মৃত্যুর ‘আদর্শ স্পট’ হয়ে উঠছে বাসন্তী হাইওয়ে। পুলিশি তদন্তে কারণ হিসেবে উঠে এসেছে একটাই তথ্য— ‘বেপরোয়া গতি’। লালবাজারের ‘খাতা’ বলছে, বাসন্তী হাইওয়েতে যান চলাচলের সর্বোচ্চ গতি প্রতি ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার। কিন্তু, বাস্তবে তার থেকে অনেক বেশি গতিতে ছোটে গাড়ি। সবকটি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই ঘাতক গাড়িগুলির গতি ছিল ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের উপর। 

    এবছর শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় গতিসীমা বেঁধে দিয়েছেন কলকাতার পুলিস কমিশনার মনোজকুমার ভার্মা। উল্লেখ্য, ২৬টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মধ্যে যেগুলিতে বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চলার প্রবণতা রয়েছে, সেগুলিকে চিহ্নিত করেছে লালবাজার। সেইসব রাস্তায় গতিসীমা কত হওয়া উচিত, তা নিয়ে মাস তিনেক ধরে সমীক্ষা চালায় ট্রাফিক বিভাগ। গতিসীমা অনুযায়ী, রাস্তায় যানজট হচ্ছে কি না, তাও পরীক্ষা করে দেখা হয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতা পুলিসের তরফে এই মর্মে একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে জানানো হয়, বাসন্তী হাইওয়েতে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। সূত্রের খবর, এই রাস্তাটি তূলনামূলকভাবে অনেকটাই ফাঁকা। একাধিক জায়গায় বাঁক রয়েছে। পাশাপাশি, রাস্তায় নেই কোনও ডিভাইডার। এই রাস্তায় ৪০ কিমির বেশি গতিবেগে গাড়ি চালালে যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। 

    কিন্তু, বাস্তবে পুলিশের সেই নির্দেশিকার প্রভাব নেই বাসন্তী হাইওয়েতে। এই রাস্তায় গাড়ি ছোটে ৬০-৭০ কিলোমিটার বেগে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে অতি উৎসাহী বাইকচালক ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বা তারও বেশি গতিতে গাড়ি ছোটায়। এই রাস্তায় দু’টি স্পিড ক্যামেরা রয়েছে। লালবাজারের তথ্য বলছে, প্রতিদিন এই ক্যামেরায় অন্তত ২০-২৫টি করে গতিসীমা লঙ্ঘনের কেস হচ্ছে। আগে এই সংখ্যা আরও বেশি ছিল। একই জায়গায় বারবার কেস হওয়ায় চালকরা হয়তো কিছুটা সংযত হচ্ছেন। কিন্তু, ক্যামেরা পার করলেই ফের যে কে সেই! বাসন্তী হাইওয়ে যেন গতির স্বর্গরাজ্য। 

    পরপর তিনটি দুর্ঘটনায় এলাকাবাসীর মনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানা এলাকার বাসিন্দা জমির আলি মোল্লা বলেন, ‘এই রাস্তায় সাইকেল নিয়ে যাতায়াত করা বিপজ্জনক। ওভারটেক করার সময় গায়ের উপর উঠে পড়ে গাড়িগুলি। একটু অসতর্ক হলেই অনিবার্য মৃত্যু।’ আরেক বাসিন্দা মুন্না আলির কথায়, ‘রাতে ভয় হয়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কোনও গাড়ি এসে দরমার বাড়িতে ঢুকে গেলে স্ত্রী, ছেলেকে নিয়ে মরতে হবে আমাদের।’  
  • Link to this news (বর্তমান)