স্ত্রীকে খুন করার পরে চার বছরের শিশুপুত্রকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল সে। অভিযোগ এমনই। আশ্রয় নিয়েছিল হুগলির পান্ডুয়া থানা এলাকার বৈঁচিতে এক আত্মীয়ার বাড়িতে। কিন্তু একটি ফোন কলই ধরিয়ে দিল কাঁচরাপাড়ার ক্ষুদিরামপল্লির ভূতবাগানের বাসিন্দা কৌশিক মণ্ডলকে।
পুলিশ জানায়, কাঁচরাপাড়ার গান্ধী মোড়ের একটি মুদির দোকানের কর্মী কৌশিকের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা অঙ্কিতা বর্মণের (২৫) বিয়ে হয় বছর পাঁচেক আগে। বিয়ের পর থেকেই অঙ্কিতার ‘আধুনিক’ জীবনযাপন নিয়ে আপত্তি ছিল কৌশিকের। প্রায়ই ঝগড়া হত ওই দম্পতির। প্রতিবেশীরা জানান, সোমবার সকালেও কথা-কাটাকাটি চলছিল দু’জনের। এর পরে দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে যায় কৌশিক।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, স্ত্রীকে গলা টিপে খুন করে ওই যুবক। তার পরে ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে সে। যাওয়ার আগে কৌশিক তার বৃদ্ধ বাবাকে ঘটনার কথা বলেছিল। তিনিই অঙ্কিতার বাড়িতে খবর দিলে তরুণীর পরিজনেরা এসে দেহটি প্রথমে কাঁচরাপাড়া রেল হাসপাতাল ও সেখান থেকে কল্যাণীর জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকেরা অঙ্কিতাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ওই দম্পতির ঘর সিল করে দেয়।
কাঁচরাপাড়া থেকে বেরিয়ে ধর্মতলায় পৌঁছয় কৌশিক। সেখানে নিজের ফোনটি বন্ধ করে ফেলে দেয়। এর পরে হাওড়া থেকে ট্রেনে পান্ডুয়া পৌঁছয় ও বৈঁচিতে এক কাকিমার বাড়িতে গিয়ে ওঠে। কৌশিক যে মুদির দোকানে কাজ করত, রাতে অন্য নম্বর থেকে সেখানে ফোন করে টাকা ধার চায় সে। পুলিশ ওই নম্বরের সূত্র ধরে মাঝরাতে সেখানে হানা দিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
ব্যারাকপুরের ডেপুটি কমিশনার (উত্তর) গণেশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘পণের দাবিতে অত্যাচার ও খুনের অভিযোগ পাওয়ার পরেই সমস্ত থানাকে তা জানানো হয়। রাতেই পান্ডুয়া থানা এলাকা থেকে ধরা হয় অভিযুক্তকে। খুনের কথা সে স্বীকার করেছে। মঙ্গলবার ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক কৌশিককে সাত দিনের পুলিশি হেফাজত দেন।’’
অঙ্কিতার বাবা শঙ্কর বর্মণের অভিযোগ, ‘‘আমার মেয়েকে কৌশিক খুনের হুমকি দিত সন্দেহের বশে। টাকা আনতে বলত আমার কাছ থেকে। শেষ পর্যন্ত খুন করেই দেখাল। এক বারও সন্তানের কথা ভাবল না। পুলিশ খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় ধরা পড়ল। আমরা ওর কঠিন শাস্তি চাই।’’