আজকাল ওয়েবডেস্ক: নবরংপুরে সাপের কামড়ে ভয়াবহ মৃত্যু। খবর অনুযায়ী, ৯ মাসের শিশু ও তার বোনের মৃত্যু হয়েছে। জানা গিয়েছে, তাদের দুজনকে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়ায় প্রাণ হারায় ওই দুই ভাইবোন। ওড়িশার নবরংপুর জেলার রাজপুর গ্রামে এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটে। সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে ৯ মাসের শিশু ও তার ১১ বছরের দিদির মৃত্যু হয়। প্রাথমিক কারণ হিসেবে জানা গিয়েছে, তাদের হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় এক স্থানীয় ওঝার (স্থানীয়ভাবে 'গুনিয়া' নামে পরিচিত) কাছে। এই কুসংস্কারাচ্ছন্ন সিদ্ধান্তই দুই শিশুর মৃত্যুর প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর এই ঘটনা ঘিরেই তোলপাড় চারিদিক।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে উমেরকোট থানার অন্তর্গত রাজপুর গ্রামে এটি ঘটে৷ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল শিশু রিতুরাজ হরিজন (৯ মাস) এবং তার দিদি অমিতা হরিজন (১১)। রাত ১১টা নাগাদ একটি বিষধর সাপ আচমকা তাদের কামড়ায়। আক্রান্ত হওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা তড়িঘড়ি করে তাদের হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে স্থানীয় এক গুনিয়ার কাছে নিয়ে যান, যিনি ঝাড়ফুঁক করে বিষ নামানোর দাবী করেন।
প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলা নানা ধরনের ঝাড়ফুঁক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পরও যখন দুই শিশুর অবস্থার অবনতি হতে থাকে, তখন অবশেষে তাদের ভোর ৪ টের দিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা শিশু দু’টিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
রিতুরাজ ও অমিতার বাবা কৃষ্ণ হরিজন জানান, 'আমরা প্রথমে ওঝার কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওদের অবস্থা খারাপ হওয়ায় পরে হাসপাতালে নিয়ে আসি। ডাক্তার বললেন তখন আর কিছু করার ছিল না।'
জেলা চিফ মেডিক্যাল অফিসার (CDMO) সন্তোষ কুমার পণ্ডা ঘটনার জেরে জানান, 'শিশুদের এক অত্যন্ত বিষধর সাপ কামড়েছিল। কামড়ের পর প্রথম দুই ঘণ্টা ‘গোল্ডেন পিরিয়ড’ হিসেবে ধরা হয়, যেখানে অ্যান্টি-ভেনম দিলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু পরিবারের কুসংস্কারে ভরসা করে ওরা ওঝার কাছে গিয়ে সময় নষ্ট করে ফেলে। ফলে, যখন হাসপাতালে আনা হয়, তখন সব শেষ।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা গ্রামের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রচার চালাচ্ছি। কিন্তু এখনও অনেকেই অন্ধবিশ্বাসে ভরসা রাখেন।'
ওড়িশা রাজ্যের বিশেষ ত্রাণ কমিশনারের দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতি বছর রাজ্যে প্রায় ৩,০০০টি সাপের কামড়ের ঘটনা ঘটে এবং তার প্রায় ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগীদের সময়মতো হাসপাতালে না আনার ফলে মৃত্যু ঘটে।এই ঘটনায় প্রশ্ন ওঠে, কুসংস্কার আর চিকিৎসা সম্পর্কে অজ্ঞতা কীভাবে জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকে মানুষকে এই ধরনের অন্ধবিশ্বাস থেকে বেরিয়ে এসে বৈজ্ঞানিক ও আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখার আবেদন জানানো হয়েছে।