• পিণ্ডদানের রাজনীতি ঘিরে সরগরম বিহার, কেন তৈরি হল এই পরিস্থিতি...
    আজকাল | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহারের হাই ভোল্টেজ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক কটাক্ষে সরগরম পরিবেশে হঠাৎই হিন্দুদের এক প্রাচীন আচার পিণ্ডদান এখন আলোচনার কেন্দ্রে। রাজদ (আরজেডি) প্রধান লালু প্রসাদ যাদব ও তাঁর ছেলে তেজস্বী যাদব মঙ্গলবার গয়া শহরে গিয়ে তাঁদের পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে পিণ্ডদান সম্পন্ন করেছেন। শোনা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও শিগগিরই গয়া সফর করে প্রয়াত মা হীরাবেন মোদীর জন্য পিণ্ডদান করতে পারেন। এই জল্পনাকে ঘিরে রাজনৈতিক বাকযুদ্ধ তীব্র হয়ে উঠেছে।

    পিণ্ডদান একটি হিন্দু ধর্মীয় আচার, যেখানে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে শ্রাদ্ধ ও পূজা করা হয়। গরুড় পুরাণসহ প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী, এই আচার আত্মার শান্তি বিধান করে। নিয়ম অনুযায়ী, পুরোহিত মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে ভাত বা আটা দিয়ে তৈরি গোল বলি (পিণ্ড) পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে অর্পণ করা হয়।

    বিহারের গয়া হিন্দুদের কাছে বিশেষভাবে পবিত্র স্থান। প্রতি বছর লক্ষাধিক ভক্ত এখানে এসে পিতা-মাতা ও আত্মীয়দের প্রয়াণের পর পিণ্ডদান করেন। বিশেষ করে বিষ্ণুপদ মন্দির, যেখানে ৪০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের শিলাস্তম্ভে ভগবান বিষ্ণুর পদচিহ্ন রয়েছে বলে বিশ্বাস পিণ্ডদানের প্রধান কেন্দ্র। এছাড়াও ফল্গু নদীর তীরে ও অক্ষয়বট বৃক্ষের নীচে বহু মানুষ আচার সম্পন্ন করেন।

    সূত্রের খবরে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী মোদি মা হীরাবেনের জন্য গয়া গিয়ে পিণ্ডদান করতে পারেন। কংগ্রেস নেতারা দাবি করেছেন, মোদির পরিবার ইতিমধ্যেই এই আচার করেছে। তবে পণ্ডিতরা বলছেন, পিণ্ডদান একাধিকবার করা যায়, এবং বিশেষত ‘পিতৃপক্ষ’-এ এর গুরুত্ব অনেক বেশি। আসলে প্রধানমন্ত্রী যখন বিহার সফরে যাচ্ছেন, তখনই চলছে পিতৃপক্ষ ১৬ দিনের এক বিশেষ সময়কাল যা পিণ্ডদানের জন্য সর্বাধিক শুভ বলে বিবেচিত।আরজেডি প্রতিষ্ঠাতা লালু যাদব অসুস্থ হলেও পরিবারকে নিয়ে গয়া গিয়েছেন। বিষ্ণুপদ মন্দিরে স্ত্রী ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ি দেবী, ছেলে তেজস্বী যাদব এবং পুত্রবধূ রাজশ্রীর সঙ্গে পিণ্ডদান সম্পন্ন করেন। তেজস্বী যাদব সংবাদমাধ্যমকে জানান, “পিতৃপক্ষ শুরু হয়েছে। আমার বাবা পূর্বপুরুষদের জন্য পিণ্ডদান করেছেন। এই আচার আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রথম আমাদের গোটা পরিবার একসঙ্গে এখানে এসেছি।”

    ভোটের আগে পিণ্ডদানকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়েছে। জেডিইউ নেতা নীরজ কুমার লালু প্রসাদকে দুর্নীতি ও বংশতন্ত্র চালানোর অভিযোগে আক্রমণ করে বলেন, “তিনি কবে তাঁর রাজনৈতিক পাপ মোচনের জন্য পিণ্ডদান করবেন?” এর জবাবে আরজেডি ও কংগ্রেস নেতারা তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়ে জানান, এই ধরনের মন্তব্য প্রমাণ করে জেডিইউ নেতার মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। বিজেপির প্রাদেশিক সভাপতি দিলীপ কুমার জয়সওয়াল অবশ্য জেডিইউ নেতার মন্তব্য থেকে দলকে সরিয়ে নিয়েছেন।

    আসলে লালু যাদব নিজেই মাসখানেক আগে এমন এক মন্তব্য করে রাজনৈতিক ঝড় তুলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মোদির গয়া সফরের আগে তিনি বলেছিলেন, “মোদিজি আজ গয়া যাচ্ছেন নীতীশ কুমারের রাজনীতি ও তাঁর দলের পিণ্ডদান করতে।” এই কটাক্ষে বিজেপি ও তার সহযোগীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। তারা পাল্টা মন্তব্য করে বলে, প্রধানমন্ত্রী বরং বিরোধী জোটের পিণ্ডদান করবেন।
  • Link to this news (আজকাল)