ছুটে এসে নৌকায় ঝাঁপ দিল বাঘ, ঘাড় কামড়ে মৎস্যজীবীকে টেনে নিয়ে গেল জঙ্গলের মধ্যে, গর্জনে কেঁপে উঠল এলাকা ...
আজকাল | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: সুন্দরবনে ফের বাঘের মুখে মৎস্যজীবী। চামটার জঙ্গলের ধার থেকে এবার এক মৎস্যজীবীকে জঙ্গলে টেনে নিয়ে গেল বাঘ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে নিখোঁজ ওই মৎস্যজীবী চিরঞ্জিত মণ্ডলের বাড়ি গোসাবার কালিদাসপুরে। এবিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার মুখ্য বন আধিকারিক নিশা গোস্বামী বলেন, 'নিখোঁজ ওই মৎস্যজীবীর খোঁজে জঙ্গলে তল্লাশি চালাচ্ছেন বনকর্মীরা।'
চলতি সপ্তাহের সোমবার বিকেলে এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৩১ আগস্ট গোসাবা ব্লকের সুন্দরবন কোস্টাল থানা এলাকার কালিদাসপুরের বাসিন্দা চিরঞ্জিত মণ্ডল-সহ তিনজন মৎস্যজীবী সুন্দরবনের নদীতে মাছ ধরতে যান। সোমবার বিকেলে চামটার জঙ্গলের কাছে তাঁরা মাছ ধরছিলেন। নৌকা পাড়ের কাছাকাছিই ছিল। সেইসময় হঠাৎ করে একটি বাঘ জঙ্গল থেকে ছুটে এসে মৎস্যজীবীদের নৌকায় ঝাঁপ দেয়। বাঘটি এরপর সোজাসুজি চিরঞ্জিতের ঘাড়ে কামড় বসিয়ে একটানে নৌকা থেকে টান দিয়ে নিচে নামিয়ে নেয় এবং মুখে করে সোজা জঙ্গলে ঢুকে যায়।
আচমকা বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়ায় নৌকায় বাকি দুই মৎস্যজীবী হকচকিয়ে যায়। সেইসঙ্গে বাঘের ওজনের জন্য নৌকাটি প্রচন্ডভাবে দুলে ওঠে। কোনোরকমে সামাল দিয়ে তাঁরা সম্বিত ফিরে পেতেই দেখে চিরঞ্জিতকে মুখে নিয়ে বাঘটি জঙ্গলে ঢুকে যাচ্ছে। এবার পাল্টা তাঁরাও হৈ হৈ করে ওঠেন। নদীর পাড় থেকে কিছুটা উপরে উঠে বাঘটি নৌকায় দুই মৎস্যজীবীর দিকে তাকিয়ে প্রচন্ড শব্দে গর্জন করে ওঠে। আওয়াজে কেঁপে ওঠে গোটা জঙ্গল। এরপরেই কোনোদিকে না তাকিয়ে বাঘটি চিরঞ্জিতকে নিয়ে জঙ্গলে ঢুকে যায়। সাহস সঞ্চয় করে পিছু না হটে দুই মৎস্যজীবীও বাঘের পিছন পিছন চিৎকার করতে করতে এগিয়ে যান। কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গিয়েছে, বাঘটি চিরঞ্জিতকে নিয়ে এরপর গভীর জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। ফলে পিছনে ধাওয়া করেও দুই মৎস্যজীবী তাঁদের সঙ্গীকে উদ্ধার করতে পারেননি।
মঙ্গলবার বিকেলে তাঁরা শেষপর্যন্ত সুন্দরবন থেকে মাছ ধরা বন্ধ করে এলাকায় ফিরে আসেন। খবর দেওয়া হয় বন দপ্তর ও কোস্টাল থানায়। শুরু হয় তল্লাশি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বাঘের কবলে পড়া নিখোঁজ মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করা যায়নি বলেই জানা গিয়েছে। ভেঙে পড়েছে চিরঞ্জিতের পরিবার।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সুন্দরবনের সজনেখালি রেঞ্জের জঙ্গলে মাছ ধরার সময় বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হয় কোস্টাল থানার ছোট মোল্লাখালির বাসিন্দা গণেশ কাহারের। গণেশ কাহার দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন কোস্টাল থানার ছোট মোল্লাখালির বাসিন্দা। ঘটনার দিন সকালে বাসুদেব সরকার ও গোপাল বৈদ্য নামে স্থানীয় দুই মৎস্যজীবীর সঙ্গে তিনি সুন্দরবনের জঙ্গলে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। তবে সেখানেই যে জঙ্গলে ঘাপটি মেরে বাঘ বসেছিল তা কারও নজরে আসেনি। এরপর মৎস্যজীবীরা অসতর্ক হতেই আচমকা গণেশের ওপর বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাঁর চিৎকার শুনে তখন অন্যান্য মৎস্যজীবীরা সেখানে ছুটে আসেন। এদিকে গণেশের উপর হামলার পর তাঁকে জঙ্গলে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বাঘ। কিন্তু তাঁর অন্যান্য সঙ্গীরা সেখানে চলে এসে বাঘের মুখ থেকে গণেশকে টেনে নিয়ে আসেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত গণেশকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
সুন্দরবনে বাঘের হানায় মৃত্যুর বহু ঘটনা আছে। কখনও কাঁকড়া ধরার জন্য আবার কখনও মাছ ধরতে গিয়ে গভীর জঙ্গলে যাওয়ার ফলে বাঘের হানায় মৃত্যু হয় মৎস্যজীবীদের। প্রশাসনের তরফে এ নিয়ে বারবার মৎস্যজীবীদের সতর্ক করা হয়। তারপরেও তাঁরা সেই সতর্কতায় কর্ণপাত না করে জীবিকার টানে গভীর জঙ্গলে চলে যান। আর তাতেই ঘটে বিপত্তি।