• দুর্নীতির কালিতে কালিমালিপ্ত বিরোধী শিবির! প্রমাণিত অযোগ্যদের তালিকায় বাম এবং বিজেপি নেতাদের পরিবারের সদস্যও...
    আজকাল | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে এত দিন শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকেই চরম সমালোচনার মুখে পড়তে হত, যদিও সবটাই প্রমাণ সাপেক্ষ। যা এখনও প্রমাণ করতে পারিনি বিরোধী শিবির কিংবা কেন্দ্র সরকার। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা দপ্তরের স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-র প্রকাশিত ‘অযোগ্য’ শিক্ষকদের তালিকা প্রমাণ করছে, এই কালো দাগ শুধু শাসকের গায়েই নয়, বিরোধী শিবিরও সমানভাবে জড়িয়ে রয়েছে দুর্নীতির জালে। দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গ—প্রায় প্রতিটি জেলা থেকেই উঠে এসেছে বাম ও বিজেপি-ঘনিষ্ঠ কিংবা তাদের পরিবারের বেশ কয়েকজনের নাম।

    বর্ধমান-বীরভূমে বিজেপি নেতার ভাই

    অযোগ্যের তালিকায় প্রথমেই মিলেছে বিজেপির রাজ্য নেতা পিন্টু শ্যামের দাদা সৌরভ শ্যামের নাম। তিনি উত্তরবঙ্গের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করছিলেন। যদিও পিন্টু শ্যামের দাবি, “এ সবই ষড়যন্ত্র। সিবিআই সঠিকভাবে তদন্ত করলে সব সত্য সামনে আসবে।” এছাড়া বর্ধমানের থেকে সামনে এসেছে মৌমিতা কুণ্ডুর নাম। যিনি স্থানীয় বিজেপি নেতার আত্মীয়া।

    মেদিনীপুরে নিয়োগ নিয়ে একাধিক বিতর্ক

    পূর্ব মেদিনীপুরে আলোচনায় সৌমেন কর। তিনি ময়নার গোজিনা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান। পেশায় অঙ্কের শিক্ষক। কিন্তু ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় তাঁর ওএমআর শিট ভাইরাল হয়। ৫৫টি প্রশ্নের মধ্যে মাত্র তিনটিতে দাগ কেটেও তিনি শিক্ষক পদে নিয়োগ পান। স্কুলের টিচার-ইন-চার্জ দিলীপ মাইতি বলেন, “যোগ্যদের তালিকায় তাঁর নাম ছিল না।” বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রকাশের পর তিনি স্কুলে যাচ্ছেন না বলেই জানিয়েছেন সৌমেন। 

    উত্তর দিনাজপুরে বিজেপি নেতার ভাই

    উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ার বিজেপি নেতা তথা জেলা সহ-সভাপতি অসীমকুমার মৃধার ভাই অনুপকুমার মৃধাও রয়েছেন অযোগ্য তালিকায়। অনুপ ইসলামপুরের একটি স্কুলে ভূগোল পড়াতেন। ভাইয়ের নাম ওঠায় অসীমবাবু শুধু বলেন, “যে দোষী, তাঁর আইন অনুযায়ী বিচার হবে।”

    বীরভূমের বিজেপি নেতার স্ত্রী

    বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার কোষাধ্যক্ষ সুরজিৎ সরকারের স্ত্রী লক্ষ্মী বিশ্বাসও রয়েছেন ওই তালিকায়। তিনি প্রথমে নলহাটির কলিঠা হাইস্কুলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়াতেন। পরে বদলি হয়ে আসেন রামপুরহাটের কুসুম্বা হাইস্কুলে। তাঁর শ্বশুর অমিয় সরকার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। তবে লক্ষ্মীদেবী এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।

    সিপিএম নেতার নামও জড়াল অযোগ্য তালিকায়

    অযোগ্য তালিকায় জায়গা পেয়েছেন বনগাঁর শিক্ষক রীতেশ ঘোষ। তিনি এলাকায় সিপিএম নেতা হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। যদিও তাঁর দাবি, এখন আর দলের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, “এসএসসি স্পষ্ট করুক কেন আমাকে অযোগ্য বলা হল। আমি আদালতের দ্বারস্থ হব।”

    বিরোধীদের অযোগ্য তালিকায় নাম জড়ানো নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। দলের নেতা কানাইলাল আগরওয়ালের কটাক্ষ, “বিজেপি সরকারকে এক তরফা আক্রমণ করে, অথচ নিজেদের ঘরে কী চলছে তা দেখছে না।” 

    এই নিয়ে সুর চরিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুনাল ঘোষও। তিনি বলেন, “কাচের ঘরে বসে ঢিল ছোড়া উচিত নয়। এরা কাচের ঘরে বসেই ঢিল ছুঁড়ছে।”

    এই তথ্যপ্রকাশে আসার পর বিশেষজ্ঞদের মহলের বক্তব্য, এই তালিকা প্রমাণ করে দুর্নীতির রঙ দল নিরপেক্ষ। নিয়োগ দুর্নীতির জালে যেমন শাসক দলের নাম আছে, তেমনই বিরোধী বাম-বিজেপি নেতাদের পরিবারও ধরা পড়েছে। একদিকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘সেটিং’-এর অভিযোগ তুললেও, চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বিরোধী শিবিরও একইভাবে ‘সেটিং’-এর ফাঁদে হেঁটেছে।

    রাজনীতির ভাষায় এখানে খুব সহজেই বলা যায়— সব পাখি মাছ খায়, দোষ হয় মাছরাঙার। নিয়োগ দুর্নীতি এখন আর কেবল শাসকের গায়ে নয়, বিরোধী শিবিরও সমানভাবে কালিমা লিপ্ত হয়েছে এ কথা খুব সহজেই বলা যায়। যাকে কথায় বলে চোরের মায়ের বড় গলা।
  • Link to this news (আজকাল)