ভারতের দোরগড়ায় বিক্ষোভের আঁচ, চরম সতর্কতা জারি যোগী রাজ্যে, বন্ধ সীমান্ত, স্তব্ধ বাণিজ্যও!...
আজকাল | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তাল ভারতের পড়শি দেশ। বিক্ষোভের আঁচ যেন একেবারে ঘাড়ের কাছে। পরিস্থিতি বিচারে চরম সতর্কতা জারি যোগী রাজ্যে। সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে তথ্য, নেপাল বিক্ষোভে উত্তরপ্রদেশে জারি ব্যাপক কড়াকড়ি। বন্ধ সীমান্ত। ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিমান পথ, বড় ভাবনা বাণিজ্য নিয়েও।
রবিবার থেকে উত্তেজনা ছড়ায় নেপালে। সোমবারে মৃত্যু মিছিল। সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও, মঙ্গলে পরিস্থিতি আর জটিল হয়। মঙ্গলেই সরকার পড়ে যায় নেপালে। পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি। খুন, মৃত্যু, ভাঙচুর, অগ্নিগর্ভ নেপাল, জনতা সরকারি ভবনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে, নেতাদের উপর হামলা করেছে এবং কারাগারে হামলা চালিয়েছে। একপ্রকার পুড়ে খাক কাঠমাণ্ডু। তার প্রভাব, আতঙ্ক এ দেশেও!
ভারত-নেপাল সীমান্ত, যা দীর্ঘদিন ধরে সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং অর্থনৈতিক পারস্পরিক নির্ভরতার প্রতীক। কিন্তু রাতারাতি বদলে গিয়েছে গোটা ছবিটাই। তথ্য, উত্তর প্রদেশের ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারত-নেপাল সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে উত্তেজনা প্রতিবেশী দেশটিতে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরার পর থেকেই। বাহরাইচ থেকে লখিমপুর খেরি পর্যন্ত, সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি) এবং রাজ্য পুলিশ সীমান্ত ক্রসিং সিল করে দিয়েছে, বেসামরিক চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঝালনাথ খানালের বাসভবনে আগুন লাগানো, রাজনৈতিক অফিস ভাঙচুর এবং ধনগধিতে শত শত বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার ঘটনায় এ দেশে চাঞ্চল্য ছড়ায় আরও ব্যাপক হারে। যা ভারতকে তার অবস্থান আরও কঠোর করতে বাধ্য করেছে।
তথ্য, উত্তর প্রদেশের সাতটি সীমান্তবর্তী জেলায় জারি উচ্চ সতর্কতা। বাহরাইচে, বিক্ষোভকারীরা ভারতীয় সীমার বিচারে সেখান থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে যমুনাহা চেকপোস্টে আক্রমণ করে, ফলে সেনাবাহিনী দ্বিগুণ ব্যারিকেড তৈরি করতে বাধ্য হয়। মহারাজগঞ্জের বেলাহিয়ায়, দাঙ্গাবাজরা কাস্টমস অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং দোকানপাট লুট করে। সিদ্ধার্থনগরে, বিক্ষোভকারীরা পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে দেয়। পরিস্থিতি নজরে রেখে, ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে বিক্ষোভের আঁচ যতাহসম্ভব দূরে রাখতে দ্রুত একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
লখিমপুর খেরিতে, সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির বাসিন্দারা গভীর রাতে সীমান্ত পেরিয়ে নেপালি নিরাপত্তা বাহিনী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করার সময় সাইরেন এবং গুলির শব্দ শুনতে পান। পরিস্থিতি বিচারে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার ফলে বাহরাইচে ২০০টি ট্রাক আটকে পড়েছে মাঝরাস্তায়। তথ্য, কেবলমাত্র বাহরাইচেই পেট্রোলিয়াম পণ্য, এলপিজি সিলিন্ডার, সিমেন্ট এবং খাদ্যশস্য বহনকারী প্রায় ২০০ ট্রাক আটকে পড়েছে। অন্যদিকে সোনৌলিগামী বাস অর্ধেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। কাঠমাণ্ডুগামী বিমানগুলিও উত্তর প্রদেশের অন্যান্য বিমানবন্দরে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ভারত-নেপাল সীমান্ত ঐতিহাসিকভাবে উন্মুক্ত ছিল, যার ফলে ভিসা-মুক্ত ভ্রমণ এবং বাণিজ্য সমৃদ্ধি লাভ করে দুই দেশের মধ্যে। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধে থেকে সেই স্বাভাবিকতা ভেঙে পড়েছে। বাহরাইচের রূপাইধা এবং লখিমপুর খেরি'র গৌরীফান্তায় চেকপোস্ট ব্যারিকেড করে পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। শুধুমাত্র বৈধ কাগজপত্রধারী নেপালি নাগরিকদেরই ফিরে যেতে দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে ভারতীয় নাগরিকদের তাঁদের ভ্রমণ পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে বলা হয়েছিল।
ভারত-নেপালের ব্যস্ততম প্রবেশপথগুলির মধ্যে একটি হল মহারাজগঞ্জের সোনৌলি। সেখানেও সম্পূর্ণ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এসএসবির ৬৬তম ব্যাটালিয়ন অতিরিক্ত কর্মী মোতায়েন করেছে এবং নেপালে সমস্ত বেসামরিক যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করেছে। ভারতীয় প্রত্যাবর্তনকারীদের প্রবেশের আগে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে সিদ্ধার্থনগর এবং মহারাজগঞ্জের স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে বলে তথ্য। এক ব্যবসায়ী সংবাদ মাধ্যমে পরিস্থিতি তুলে ধরে জানিয়েছেন, 'নেপালি ক্রেতারা আমাদের প্রধান গ্রাহক।' রবিবার পর্যন্ত বাণিজ্য ঠিকঠাক চলছিল সেখানে। পরিস্থিতি বদলে যায় তার পরেই। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যাত্রী পরিবহনও । উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (UPSRTC) জানিয়েছে, তাদের গোরখপুর বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য, তাদের বাস পরিষেবা ৫০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
উত্তরপ্রদেশের স্বরাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে যে সীমান্ত সুরক্ষিত করা তাদের অগ্রাধিকার। এক কর্মকর্তা ঘটনা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, 'আমরা সাতটি সীমান্তবর্তী জেলাতেই সার্বক্ষণ নজরদারি চালাচ্ছি। অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং ড্রোন নজরদারিও চলছে।'