• প্রতিবেশী দেশে কী হচ্ছে দেখুন, বিলে সম্মতি সংক্রান্ত মামলায় নেপাল এবং বাংলাদেশের উল্লেখ সুপ্রিম কোর্টের...
    আজকাল | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিলে সম্মতি দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে সময়সীমা নির্ধারিত করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলছে শীর্ষ আদালতে। বুধবার ছিল নবম দিন। সেই সংক্রান্ত শুনানি চলাকালীন দেশের প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই উল্লেখ করলেন নেপালের পরিস্থিতির কথা এবং অপর বিচারপতি বিক্রম নাথ উল্লেখ করলেন এক বছর আগে বাংলাদেশের পরিস্থিতির কথা।

    বিলে সম্মতি সংক্রান্ত বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের থেকে পরামর্শ চেয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি গবইয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এই সংক্রান্ত বিষয়ের শুনানি চলছে। সেই সময় ভারতীয় সংবিধানের কথা উল্লেখ করে (যা জনসাধারণের গুরুত্ব বহন করতে পারে বা জনসাধারণকে যে কোনওভাবে প্রভাবিত করতে পারে এমন আইনের যে কোনও বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ নেওয়ার রাষ্ট্রপতির অধিকারকে সংজ্ঞায়িত করে) প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমরা আমাদের সংবিধানের জন্য গর্বিত”। তিনি এর পরেই যোগ করেন, “দেখুন প্রতিবেশী দেশগুলিতে কী হচ্ছে। আমরা নেপাল দেখলাম”। “হ্যাঁ, বাংলাদেশও...” বিচারপতি বিক্রম নাথও জুড়ে দেন প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের সঙ্গে। 

    গত বছর বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক সহিংসতার স্মৃতি জাগিয়ে বিচারপতি নাথ। গত বছর ছাত্র-নেতৃত্বাধীন একটি বিক্ষোভ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন সহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলির নিয়ন্ত্রণ দখল এবং ভাঙচুর করে। বিক্ষোভে প্রায় ১০০ জনের মৃত্যুর পর নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের হাতে দেশের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তরিত হয়। এই সপ্তাহে নেপালের ঘটনাবলী এবং গত বছরের বাংলাদেশের ঘটনাবলীর মধ্যে মিলগুলি এড়ানো কঠিন। যার মধ্যে সংবিধান এবং আইনের শাসনের সম্পূর্ণ অবনতির বৃহত্তর বিষয়টিও জড়িত।

    গত এপ্রিলে তামিলনাড়ু সরকারের এক মামলায় কোনও বিলে সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতিকে তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ওই নির্দেশ নিয়ে আপত্তি তোলেন তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি-সহ অনেকেই। এ বিষয়ে শীর্ষ আদালতের পরামর্শ চান রাষ্ট্রপতি মুর্মুও। সলিসিটর-জেনারেল তুষার মেহতা গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বিল সংরক্ষণের বিষয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের রাজ্যপালদের পক্ষে যুক্তি দিচ্ছিলেন তখনই দুই বিচারপতির বেঞ্চ এই মন্তব্য করে। সেখানে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, ৯০ শতাংশ বিলই এক মাসের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিলে সম্মতি পেতে বিলম্ব খুবই বিরল ঘটনা বলে আদালতে জানান তিনি। তুষার মেহতার যুক্তি বিবেচনা করার সময় বিচারপতি নাথ মন্তব্য করেন যে কতগুলি বিল পাস হয়েছে বা আটকে রাখা হয়েছে তা বিবেচনা না করেই দেশ গত ৭৫ বছর ধরে কাজ করছে।

    তবে প্রধান বিচারপতি গাভাই সলিসিটর জেনারেলের যুক্তিতে সন্তুষ্ট হননি। তিনি বলেন, “আমরা পরিসংখ্যান নিতে পারি না... এটা তাদের (রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সের বিরুদ্ধে যুক্তি দিয়েছিল রাজ্য) প্রতি ন্যায্য হবে না। আমরা তাদের পরিসংখ্যান নিইনি। আমরা আপনার পরিসংখ্যান কীভাবে নেব?” তিনি জিজ্ঞাসা করেন, “আমরা এই পরিসংখ্যানে যাব না... আগে আপনি তাদের পরিসংখ্যানে আপত্তি জানিয়েছিলেন।”

    মেহতা শীর্ষ আদালতকে জানিয়েছেন, ১৯৭০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত মাত্র ২০টি বিল আটকে ছিল। যার মধ্যে তামিলনাড়ু সরকার কর্তৃক পাস হওয়া সাতটি বিলও রয়েছে, যা রাজ্যপাল আরএন রবি বিলম্বিত করেছিলেন। যার ফলে ক্ষমতাসীন ডিএমকে তীব্র প্রতিবাদ করেছিল এবং আইনি পথ বেছে নিয়েছিল।

    অতীতে, অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি যেমন, তামিলনাড়ু, কেরল এবং পাঞ্জাব তাদের নিজ নিজ রাজ্যপালদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে রাজ্য আইনসভা কর্তৃক পাস হওয়া বিলগুলিতে সম্মতি আটকে রাখার বা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে বিলম্বিত করার অভিযোগ করেছে।

    এপ্রিল মাসে তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আরএন রবি বনাম ক্ষমতাসীন ডিএমকে-র মামলার প্রেক্ষাপটে, শীর্ষ আদালত রাজ্যপালের পদক্ষেপগুলিকে ‘স্বেচ্ছাচারী’ এবং ‘অবৈধ’ বলে অভিহিত করে। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, রাজ্য আইনসভায় দ্বিতীয়বারের মতো ফিরে আসা এবং পাস হওয়া বিলগুলিকে ৩০ দিনের মধ্যে রাজ্যপাল অথবা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। সংবিধানের ১৪৩ অনুচ্ছেদের অধীনে রাষ্ট্রপতি সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেছেন। যা তাঁকে জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আইন সম্পর্কিত যে কোনও প্রশ্নে আদালতের মতামত চাওয়ার ক্ষমতা দেয়।
  • Link to this news (আজকাল)