• এক ট্রেনে কলকাতা থেকে মিজোরাম, কখন ছাড়বে আর কখনই বা পৌঁছবে?
    আজকাল | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: আর মাত্র কয়েক দিনের অপেক্ষা। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৭৮ বছর পর ভারতীয় রেলপথে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার সঙ্গে সংযুক্ত হতে চলেছে পূর্ব ভারতের ছোট্ট রাজ্য মিজোরাম। আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবুজ পতাকা দেখিয়ে উদ্বোধন করতে চলেছেন বৈরাবি -সাইরাং রেলপথের। মিজোরামের জঙ্গলে ঘেরা স্বপ্নের পথ ধরে, সরীসৃপের মতো আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে, একাধিক টানেল পেরিয়ে ভারতীয় রেলের প্রথম রেক স্পর্শ করবে মিজোরামের মাটি। সবকিছু পরিকল্পনামাফিক চললে ওই দিনই সাইরাং-কলকাতা রেলপথের প্রথম বিশেষ ট্রেনটি বৈরাবি স্টেশন থেকে সকাল ১০ টা নাগাদ কলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে। তারপরই কলকাতা স্টেশন থেকে এক ট্রেনে সরাসরি পৌঁছে যাওয়া যাবে মিজোরামে। 

    রেল বোর্ডের ডিরেক্টর (কোচিং) সঞ্জয় আর নিলম-এর জারি করা নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, সপ্তাহে তিন দিন কলকাতা থেকে এই ট্রেন মিজোরামের সাইরাং স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে এবং ফিরতি পথে সাইরাং থেকে কলকাতার দিকে তিন দিন এই ট্রেন চলবে। ইতিমধ্যে রেল বোর্ডের তরফ থেকে আপ এবং ডাউন কলকাতা - সাইরাং ট্রেনের নম্বরও ইস্যু করা হয়েছে। পূর্ব রেলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় রেলমন্ত্রক ইতিমধ্যেই নতুন এই ট্রেনটির যাত্রা সূচনার জন্য সবুজ সংকেত দিয়েছে। আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর বিশেষ ট্রেন মিজোরাম থেকে সকাল ১০ টা নাগাদ ছাড়বে এবং পরের দিন বিকাল ৫ টা নাগাদ কলকাতা স্টেশনে এসে পৌঁছবে।

    রেল সূত্রে জানা গিয়েছে , কলকাতা স্টেশন থেকে এক্সপ্রেস ট্রেনটি সপ্তাহে তিনদিন দুপুর ১২ টা ২৫ মিনিটে যাত্রা শুরু করে পরের দিন রাত ৭ টা বেজে ৪৫ মিনিট নাগাদ মিজোরামের সাইরাং স্টেশনে গিয়ে পৌঁছাবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঠিক হয়েছে কলকাতা থেকে এই ট্রেনটি শনিবার, মঙ্গলবার এবং বুধবার যাত্রা করবে। উল্টো দিকে সাইরাং স্টেশন থেকে কলকাতার দিকে ট্রেনটি সোমবার, বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার যাত্রা করবে। 

    রেল দপ্তর সূত্রের খবর, কলকাতা স্টেশন থেকে ছাড়ার পর ট্রেনটির প্রথম স্টপেজ হবে নৈহাটি। এরপর কৃষ্ণনগর, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ জংশন, আজিমগঞ্জ-সহ পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহারের বেশ কয়েকটি স্টেশনে থামার পর অসমের কামাখ্যা, গুয়াহাটি , হাইলাকান্দি হয়ে মিজোরামের সাইরাং স্টেশনে গিয়ে যাত্রা শেষ করবে। 

    নতুন এই ট্রেনটি চালু করার জন্য রেলের তরফ থেকে দু'টি এলএইচবি 'রেক' বরাদ্দ করা হয়েছে। 

    প্রসঙ্গত, প্রায় দেড় বছর আগে মুর্শিদাবাদ জেলার লালবাগ শহরের কাছে ভাগীরথী নদীর উপর নশিপুর রেল ব্রিজটি পুনরায় চালু হওয়ায় উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের রেল যোগাযোগের নতুন একটি পথ খুলে গিয়েছে। প্রত্যেক বছর এই রাজ্য থেকে ভ্রমণপিপাসু বহু মানুষ মিজোরামে বেড়াতে যান। কিন্তু তাদের কাছে মিজোরামে পৌঁছনোর জন্য সরাসরি কোনও ট্রেন এতদিন ছিল না। 

    নতুন ট্রেনটি চালু হয়ে গেলে ভ্রমণপিপাসু বাঙালি যেমন উত্তরবঙ্গে যাওয়ার জন্য নতুন একটি ট্রেন পাবেন, একই সঙ্গে তাদের কাছে উত্তর-পূর্ব ভারতে যাওয়ার জন্য নতুন একটি ট্রেন হাজির হবে। 

    মুর্শিদাবাদের বিধায়ক গৌরী শংকর ঘোষ বলেন,' মুর্শিদাবাদ স্টেশন এবং আজিমগঞ্জ জংশনের মাঝে নশিপুর রেল ব্রিজের কাজ দীর্ঘদিন জমি জটের কারণে বন্ধ হয়ে পড়েছিল। দীর্ঘদিন লড়াই করার পর এবং স্থানীয় মানুষকে বুঝিয়ে এই ব্রিজ বর্তমানে চালু করা সম্ভব হয়েছে। তার ফলে মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনার মত জেলার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেলপথে যোগাযোগ আরও সুগম হয়েছে।'

    তিনি বলেন,' একসময় কিছু মানুষ মনে করতেন এই ব্রিজ কেবলমাত্র মালগাড়ি যাওয়ার জন্যই তৈরি হয়েছে। কিন্তু নশিপুর ব্রিজের উপর দিয়ে এখন হামসফর এক্সপ্রেসের মতো ট্রেন উত্তরবঙ্গে যাচ্ছে। রেলবোর্ড কলকাতা স্টেশনের সঙ্গে মিজোরামের সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য নতুন যে ট্রেনটি চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে এর ফলে প্রচুর মানুষ একটি ট্রেনে চেপেই সরাসরি পশ্চিমবঙ্গ থেকে মিজোরাম চলে যেতে পারবেন।'

    গৌরী শংকরের কথায়, ,'সাইরাং-কলকাতা এক্সপ্রেস ট্রেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে দুর্গাপুজোর আগে রেলের তরফে একটি উপহার। পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য কলকাতা এবং শিয়ালদহ থেকে নশিপুর রেল ব্রিজের উপর দিয়ে আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কমপক্ষে আরও দু'জোড়া নতুন ট্রেন চালু হতে চলেছে।'
  • Link to this news (আজকাল)