দ্রুত ফিরুক শান্তি, সেই সঙ্গে অচলাবস্থা কাটিয়ে ফের ভারতীয় সেনায় যোগদান করুন নেপালের গোর্খারা...
আজকাল | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আর কে দাশ (প্রাক্তন বায়ুসেনা কর্তা)
নেপালের অচলাবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে প্রভাব পড়তে পারে ভারতীয় প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও। কারণ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে গোর্খা রেজিমেন্ট একটি অত্যন্ত পরিচিত নাম। যা শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারণ করা হয়। ব্রিটিশ আমল থেকেই নেপালের গোর্খারা এই দেশের প্রতিরক্ষার সঙ্গে যুক্ত। স্বাধীনতার পর যা আরও বেড়েছে। বিদেশি শক্তির সঙ্গে যখনই যুদ্ধ হয়েছে তখন এই গোর্খারা তাঁদের বীরত্বের পরিচয় দিয়ে এসেছেন।
কিন্তু নেপালের গোর্খাদের এই যোগদান ধাক্কা খায় গত ২০১৯ সালে। করোনা পরিস্থিতির জন্য যেমন তাঁদের যোগদান স্থগিত রাখা হয়েছিল তেমনি বর্তমানে ভারতীয় সেনায় চালু হওয়া 'অগ্নিবীর' প্রকল্পেও তাঁরা যোগদান করতে চাননি। এই প্রকল্পে চাকরির মেয়াদ স্বল্পকালীন এবং এখানে অবসরের পর কোনো পেনশনের ব্যবস্থা নেই। এর আগে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে প্রতিবছর ১২০০ থেকে ১৫০০ নেপালি গোর্খা অন্তর্ভুক্ত হলেও সেটা বর্তমানে হচ্ছে না। ফলে গোর্খা বাহিনীতে শূন্যপদ তৈরি হয়েছে। চলতি বছর পর্যন্ত ৩৪,০০০ থেকে ৪০,০০০ নেপালি গোর্খা ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ছিলেন। এরমধ্যে অনেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। কিন্তু নতুন করে নেপালি গোর্খা নিয়োগ না হওয়ায় অনেক পদ শূন্য রয়েছে। যদিও ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী জানিয়েছেন, আধুনিক রণনীতিতে এর কোনও প্রভাব পড়বে না। কিন্তু পাশাপাশি তিনি এটাও জানিয়েছেন, যদি ভবিষ্যতেও নিয়োগ না হয় তাহলে সেটা কিন্তু একটা প্রভাব ফেলবে।
এই মুহূর্তে দার্জিলিং, দেরাদুন বা ধর্মশালা থেকে গোর্খাদের ভারতীয় সেনায় যথেষ্ট পরিমাণে নিয়োগ হলেও গোর্খা রেজিমেন্টের সদস্য সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। নেপালের গোর্খা নিয়োগের ক্ষেত্রে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে তাতে প্রতিবেশী দেশ নেপালে ভারতের প্রভাব ধাক্কা খাচ্ছে এবং চিনের মতো দেশকে সেখানে পা ফেলবার সুযোগ করে দিচ্ছে। যদি এই অচলাবস্থা দ্রুত না কাটিয়ে ওঠা যায় তাহলে আগামী সাত বছরের মধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নেপালের গোর্খাদের সংখ্যা অর্ধেক হয়ে যাবে এবং ২০৩৭ সালে পৌঁছে আর কিছু থাকবেই না।
অথচ এই রেজিমেন্ট বারবার তাঁদের স্বকীয়তা প্রমাণ করেছে। সেনার বিষয়টা হল সেখানে শুধু সাহসের প্রয়োজনই হয় না। এর সঙ্গে প্রয়োজনীয় হল উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন। ১৯৪৭ সালে ভারতের যখন নিজস্ব বাহিনী তৈরি হল তখন থেকেই এই দুটি জিনিস গোর্খারা বারবার প্রমাণ করে দিয়েছেন। ফলে আমার মনে হয় নেপালের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর দ্রুত নেপালের গোর্খাদের ভারতীয় সেনায় অন্তর্ভুক্তি নিয়ে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে সেটার সমাধানে এগিয়ে আসা।
নেপালে ‘জেন জি’ বিক্ষোভ দ্রুত অশান্তির রূপ নেয়। প্রতিবাদ প্রথমে সমাজমাধ্যম নিষিদ্ধ করা নিয়ে শুরু হলেও, দুর্নীতি-সহ আরও নানা ইস্যু সেখানে যুক্ত হয়। মঙ্গলবার পরিস্থিতি বদলে যায় চোখের নিমেষে। কাঠমাণ্ডু জুড়ে তাণ্ডব চালায় জেন জি। বিভিন্ন সরকারি ভবনে আগুন, পার্লামেন্টে আগুন ধরিয়ে দেওয়া, পাঁচবারের নেপালের প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা এবং তাঁর স্ত্রীর উপর হিংস্র জনতা হামলা চালায়। বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঝালনাথ খানালের স্ত্রী রাজ্যলক্ষ্মী চিত্রকরের ঝলসে মৃত্যু হয়।
সোমবার বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ব্লক করার কারণে ক্ষুব্ধ তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভকারীরা রাজধানী কাঠমান্ডু দখল করে নেয়। যার ফলে পুলিশ ক্ষিপ্ত জনতার উপর গুলি চালাতে বাধ্য হয়। এর ফলে ১৯ জন নিহত হন। মঙ্গলবার বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির পদত্যাগ করেন। তা সত্ত্বেও আন্দোলন ভয়াবহ রূপ নেয়। বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবন এবং রাজনীতিবিদদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং কিছু নেতার উপর হামলাও চালায়।