রেশন থেকে পরিবার পিছু ৩৫ কিলো খাদ্যশস্য বন্ধের ভাবনা, কেন্দ্রের ‘গোপন নোটে’ জল্পনা
বর্তমান | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: তবে কি এবার অতি গরিব রেশন গ্রাহকদের গ্রাস কেড়ে নেবেন নরেন্দ্র মোদি? গণবণ্টন ব্যবস্থায় বদলের উদ্যোগ নেওয়াতেই এই প্রশ্ন উঠছে। প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড এবং অন্তোদ্যয় অন্ন যোজনা- জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনে এই দুই ভাগে গ্রাহকদের খাদ্যশস্য দেওয়া হয়। এখন যা বিনামূল্য পান দেশের প্রায় ৮১ কোটি নাগরিক। কোভিডের পর থেকে অবশ্য নাম বদলে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা নামে বিনামূল্যে ওই চাল-গম দেওয়া হচ্ছে। প্রায়োরিটি হাউসহোল্ডরা পান ‘ব্যক্তি’ পিছু মাসে পাঁচ কিলো খাদ্যশস্য। অন্তোদ্যয় অন্ন যোজনায় মেলে ‘পরিবার’ পিছু ৩৫ কিলো।
এবার এই অন্তোদ্যয় অন্ন যোজনার গ্রাহকদের ওপরই কোপ পড়তে চলেছে। সরকারের তৈরি ‘গোপন নোট’ সেকথাই বলছে। খরচ বাঁচাতেই এই পরিকল্পনা। মন্ত্রকের গোপন নোটে দেখা যাচ্ছে, অন্তোদ্যয় অন্ন যোজনার গ্রাহকদের আর ‘পরিবার’ পিছু খাদ্যশস্য দেওয়া হবে না। দেওয়া হবে প্রায়োরিটি হাউসহোল্ডের মতোই ‘ব্যক্তি’ পিছু। এতে সরকারের প্রতি মাসে ১,১৩২কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলেই হিসেব কষেছে খাদ্যমন্ত্রক।
দেশে এই মুহূর্তে কত অন্তোদ্যয় পরিবার রেশন দোকানের মাধ্যমে খাদ্যশস্য পায়? তারা ঠিকমতো রেশন পায় তো? নোট তৈরির আগে খাদ্যমন্ত্রকের পক্ষ থেকে রেশন দোকানদারদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। যদিও ‘অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনে’র সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু সরকারের এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে এই ‘ভাবনা’ বন্ধের দাবি করেছেন। বলেছেন, ‘এটি জনবিরোধী, গরিব বিরোধী উদ্যোগ।’
অন্তোদ্যয় অন্ন যোজনায় পরিবারে গড়ে সাতজন সদস্য, এমনটা ধরে নিয়েই মাসে পাঁচ কিলো হিসেবে রেশন দেওয়া হয়। কিন্তু মন্ত্রকের গোপন নোটে বলা হয়েছে, সাতজনের পরিবারের সংখ্যা অনেক কম। গোটা দেশে মাত্র ৮ লক্ষ ২১ হাজার ১৪৯ টি। সেই হিসেবে এক, দুই, চার সদস্যর মতো অন্তোদ্যয় পরিবারের সংখ্যাই বেশি। ফলে অহেতুক সরকারের ফ্রি খাদ্যশস্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত চলে যাচ্ছে। খাদ্যমন্ত্রকের হিসেব, গোটা দেশে ২ কোটি ৩৭ লক্ষ অন্তোদ্যয় পরিবার রয়েছে। যার সদস্য সংখ্যা ৮ কোটি ৯২ লক্ষ। এর মধ্যে পাঁচ সদস্যের কম অন্তোদ্যয় পরিবারের সংখ্যা ১ কোটি ৭১ লক্ষ।
আবার পাঁচ সদস্যের অধিক অন্তোদ্যয় পরিবার রয়েছে ২৫ লক্ষ ৮২ হাজার। ফলে কম সদস্যর পরিবারও অতিরিক্ত খাদ্যশস্য পেয়ে যাচ্ছে। গড়ে অন্তোদ্যয় ব্যক্তি ৯ কিলো ৩০০ গ্রাম খাদ্যশস্য পেয়ে যাচ্ছেন। যার জেরে সরকারের ভাঁড়ার থেকে রেরিয়ে যাচ্ছে অতিরিক্ত ২ লক্ষ ৩৩ হাজার ১২১ টন চাল-গম। তাই পরিবার পিছু ব্যবস্থা বন্ধ করে ব্যক্তি পিছু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে অন্তোদ্যয় ব্যক্তিকে মাসে সাড়ে সাত কিলো খাদ্যশস্য দেওয়া হতে পারে। এই ব্যবস্থা কার্যকর করতে সংসদে আইন সংশোধন করতে হবে। তারই তোড়জাড় চলছে। যদিও বিরোধীরা যে মোদির এই উদ্যোগ রোখারই চেষ্টা করবে, বলাই বাহুল্য।