নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি, শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি: ভোটার তালিকা শুদ্ধকরণের নামে দেশজুড়ে স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন (এসআইআর) হচ্ছেই। এবং সব কিছু ঠিক থাকলে উৎসবের মরশুম শেষ হলেই পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা দেশে ঢাকে কাঠি পড়ে যাবে এসআইআরের। সেই মতো দেশের সব রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে (সিওই) ২৬ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রস্তুতি পর্ব শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার। বুধবার ‘ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টে’র প্রেক্ষাগৃহের দিনভর বৈঠকে রিপোর্ট নেওয়া হয়েছে রাজ্যের নির্বাচনী আধিকারিকদের থেকে। জানতে চাওয়া হয়েছে, কে কতটা প্রস্তুত। কার কী সমস্যা। যাঁরা তৈরি নন, তাদেরই বা কতদিন সময় লাগবে। বিহারের সিইও অবশ্য তাঁর রাজ্যের গোটা প্রক্রিয়া স্লাইড শোয়ের মাধ্যমে বৈঠকে দেখিয়েছেন। কমিশন সূত্রে খবর, সিংহভাগ সিইও পুরোদমে কাজ শুরুর ব্যাপারে নিশ্চিত করেছেন। এদিনের বৈঠকের যা নির্যাস, তাতে উৎসবের মরশুম মিটলে এসআইআরের ঘোষণা শুধু সময়ের অপেক্ষা। খুব শীঘ্রই তিন কমিশনার বসে নির্দিষ্ট তারিখ ঠিক করবেন।
সুপ্রিম কোর্টে বিহারের এসআইআর নিয়ে মামলা চলছে। বিশেষ সূত্রে খবর, তার রায় দেখে নিয়েই দিনক্ষণ ঘোষণা হবে। ভোটার তালিকায় নাম তোলা বা বাতিলের জন্য আধার কার্ড গ্রহণ সহ শুদ্ধকরণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার প্রসঙ্গ তুলে সুপ্রিম কোর্ট ভারতের নির্বাচন কমিশনকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তবে এসআইআর প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ দেয়নি। তাই কমিশনের আশা, বিহার এসআইআর মামলায় শীর্ষ আদালতে তাদের বাধা আসবে না। অন্তত সম্পূর্ণ এসআইআর বন্ধ করে দেওয়ার রায় সুপ্রিম কোর্ট শোনাবে না বলেই প্রত্যাশা কমিশনের।
২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ, অসম, তামিলনাড়ু, পুদুচেরি এবং কেরলে ভোট। তাই এই রাজ্যগুলিতে সবার আগে ভোটার তালিকা শুদ্ধকরণ শুরু হবে। প্রক্রিয়া শেষে প্রকৃত ভোটারদের দেওয়া হবে সম্পূর্ণ নতুন ভোটার পরিচয়পত্র। ভোটার কার্ডের সঙ্গে আধার নম্বর সংযুক্তিকরণেরও চেষ্টা চলছে। ইনিউমারেশন ফর্মেই আধার নম্বর জানতে চাওয়া হবে। নেওয়া হবে মোবাইল নম্বরও।
তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়ালের সঙ্গে আলোচনার পর কমিশনের শীর্ষ আধিকারিকদের মনে হয়েছে, এই রাজ্যে এসআইআরের কাজ নিজেদের ইচ্ছে মতো করা সহজ হবে না। বিহারে এসআইআরের কাজে দিল্লির ‘দাপটে’ কমিশনের কর্মী হিসেবে বুথ লেভেল আধিকারিকরা (বিএলও) নির্দেশ মতো কাজ করেছেন। বাংলায় বিজেপি বিরোধী তৃণমূলের সরকার। সাধারণত সরকারি কর্মী, স্কুল শিক্ষকরাই বিএলও’র কাজে নিযুক্ত হন। ফলে ফারাক একটা থেকেই যাবে। যখন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে বিরোধীরা সরব হয়েই রয়েছে। এদিনও উত্তরকন্যায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘২০০২ সালে বাংলায় এসআইআর হয়েছিল। তখন দু’বছর সময় লেগেছিল। যে তালিকা তৈরিতে দু’বছর সময় লাগে, তা তিন মাসে করা সম্ভব? দু’বছরের খাবার কি একদিনে খেতে পারবেন? বিজেপিকে সন্তুষ্ট করতে কমিশন এটা করার চেষ্টা করছে। কমিশন কোনও পার্টি নয়। গণতন্ত্র রক্ষাই তাদের দায়িত্ব।’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরও দাবি, ‘আধার কার্ডকে প্রামাণ্য নথি হিসেবে মান্যতা দিতেই হবে। কমিশন ভুয়ো ভোটার তালিকার কথা বলছে। তাহলে যে ভোটার তালিকার ভিত্তিতে সদ্য উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন, সেটা অবৈধ? কেন্দ্রের সরকারও অবৈধ? সাহস থাকলে সরকার ভেঙে দিয়ে এসআইআর করাক। তারপর ভোট। তৃণমূলের সব সাংসদ ইস্তফা দিয়ে ভোটে যাব।’