নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত ও সংবাদদাতা, বনগাঁ: অশোকনগরের পর বনগাঁ। এই ব্লকের গোপালনগরে সন্ধান মিলল খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের। তবে এই তেল ও গ্যাস উত্তোলন শুরুর আগে আরও কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা চালাবে ওএনজিসি। তাতে সন্তোষজন ফল এলেই প্রাকৃতিক গ্যাস এবং খনিজ তেলের মানচিত্রে উঠে আসবে বনগাঁর নামও। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যেও আশার সঞ্চার হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে খনিজ তেল উত্তোলন শুরু হলে এলাকার অর্থনীতির হালচালই বদলে যাবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
টানা কয়েকবছর অনুসন্ধানের পর অশোকনগরের বাইগাছি এবং ভুরকুণ্ডা পঞ্চায়েত এলাকায় খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন শুরু করেছে ওএনজিসি। বাইগাছি মৌজায় তেল ও গ্যাসের কূপ খননের জন্য ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত জমির ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অশোকনগর থেকে গোপালনগরের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। বনগাঁ-রানাঘাট লাইনের গোপালনগর স্টেশন থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরত্বে আকাইপুর পঞ্চায়েত। এই পঞ্চায়েতের কামদেবপুর গ্রামে গত ছ’মাস ধরে খনিজ তেল ও ও গ্যাসের অনুসন্ধান চালাচ্ছে ওএনজিসি। এই কাজের জন্য ইতিমধ্যে ১৫ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ওএনজিসির দিল্লি এবং কলকাতা অফিসের আধিকারিকরা নিয়মিত এসে কাজের তদারকি করছেন। তার ভিত্তিতেই ওএনজিসির বেসিন ম্যানেজার মানসকুমার নাথ জানিয়েছেন, এই জায়গায় মাটির নীচে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার থাকার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। খুব দ্রুত মূল খনন প্রক্রিয়া শুরু করতে চাইছেন তাঁরা। এই কাজের জন্য আরও জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে ওএনজিসির। সেক্ষেত্রে পঞ্চায়েতের বাসিন্দা ও স্থানীয় প্রশাসনের সবরকম সহযোগিতা পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী ওএনজিসি কর্তৃপক্ষ। তারাও যে বাসিন্দাদের পাশে থাকবে, সেই বার্তা দিতে বুধবার কামদেবপুর এলাকায় একটি অনুষ্ঠানে আকাইপুর পঞ্চায়তেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স তুলে দিয়েছে এই সরকারি সংস্থা। অনুষ্ঠানে মানসবাবু ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের কো-মেন্টর বিশ্বজিৎ দাস, আকাইপুর পঞ্চায়েতের প্রধান পূরবী সরকার প্রমুখ। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘ওএনজিসি কর্তৃপক্ষ আশার কথা শুনিয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে নিশ্চিতভাবেই এলাকার মানুষ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবেন। জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে এলাকার মানুষকে সবরকম সহযোগিতা করার কথা বলেছি।’
প্রসঙ্গত, বনগাঁ ব্লকের একটি প্রত্যন্ত এলাকার পঞ্চায়েত হিসেবে পরিচিত আকাইপুর। এই এলাকা থেকে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তের দূরত্ব মাত্র পাঁচ-সাড়ে পাঁচ কিমি। বাসিন্দাদের সিংহভাগই কৃষিজীবী। রয়েছে বাঁওড়। চাষবাসের কাজের পাশাপাশি বহু মানুষ মাছ ধরে জীবিকা চালান। অনেকে আবার দিনমজুরের কাজও করেন। ফলত পঞ্চায়েতের একটা বড় অংশের মানুষ নিম্নবিত্ত পরিবারের। তাঁরা প্রত্যেকে এখন আশায় বুক বাঁধছেন, তেল উঠলে হয়তো বদলে যাবে তাঁদের কষ্টের দিনলিপি। ওএনজিসি’ও সেই আশা দেখাচ্ছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য বাপি মণ্ডলও বলছেন, ‘খনিজ তেল ও গ্যাস উত্তোলন শুরু হলে আমাদের এলাকা বদলে যাবে।’