রাজু চক্রবর্তী, কলকাতা: গত ১০ আগস্ট শিয়ালদহ-রানাঘাট রুটে চালু হয় পূর্ব ভারতের প্রথম এসি লোকাল। পরিষেবা শুরুর আগে রেলকর্তাদের একটা দুশ্চিন্তা ছিল, বাড়তি ভাড়া দিয়ে যাত্রীরা আদৌ এই ট্রেনে উঠবেন তো! মাসখানেক পর দেখা যাচ্ছে, রেলের প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে গিয়েছে যাত্রীদের উৎসাহ। টিকিট বিক্রির পরিসংখ্যান ও সমাজ মাধ্যম সহ বিভিন্ন জায়গায় যাত্রীদের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া বুঝিয়ে দিয়েছে, এসি লোকাল পেয়ে তাঁরা খুশি। খরচ কিছুটা বেশি হলেও স্বস্তির ট্রেন-সফরই পছন্দ তাঁদের। তাই এবার হাওড়া থেকেও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লোকাল ট্রেন চালানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, হাওড়া ডিভিশনের তরফে প্রাথমিকভাবে দু’টি এসি রেক চেয়ে আবেদন করা হয়েছে রেলবোর্ডের কাছে। এই শাখার প্রথম এসি রেকটি ছুটতে পারে হাওড়া-ব্যান্ডেল রুটে। কারণ, রেলের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ব্যান্ডেল লাইন এসি লোকালের জন্য অধিকতর উপযুক্ত। অর্থাৎ, হাওড়া ডিভিশনের যাত্রীদের জন্য এসি লোকালের পরিষেবা এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।
শিয়ালদহ-রানাঘাটের পর ইতিমধ্যে কৃষ্ণনগর এবং বনগাঁ লাইনেও চালু হয়েছে এসি লোকাল। নয়া এই দুই রুটেও যাত্রীদের ভিড় কার্যত উপচে পড়ছে। রেলের একটি সূত্রের দাবি, বর্তমানে এসি রেকগুলিতে গড়ে ১০০ আসন পিছু ১৬০ জন যাত্রী আসছেন। অর্থাৎ ১০০ জন বসে এলে ৬০ জন যাত্রী দাঁড়িয়ে সফর করছেন। এই তথ্যে স্বভাবতই উৎসাাহিত রেল অন্যান্য লাইনেও এসি লোকাল চালানোর উদ্যোগ নিতে শুরু করেছ।
এর পাশাপাশি, যাত্রীদের বিপুল চাহিদা টের পেয়ে শিয়ালদহ ডিভিশনে আরও তিনটি এসি রেক নামানোর পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। পূর্ব রেলের এক কর্তা জানান, এখন শিয়ালদহ ডিভিশনে রয়েছে দু’টি এসি রেক। কৃষ্ণনগর ও বনগাঁ লাইনে চলছে সপ্তাহে পাঁচদিন। শনি ও রবিবার বন্ধ থাকছে। শিয়ালদহ-রানাঘাট রুটে বন্ধ থাকছে শুধু রবিবার। মূলত রেকগুলির সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্যই ছুটির দিনে পরিষেবা বন্ধ রাখা হচ্ছে। আরও তিনটি এসি রেক এসে গেলে সপ্তাহে সাতদিনই এই পরিষেবা দেওয়া যেতে পারে। শুধু তাই নয়, নতুন নতুন রুটে সেগুলি চালানো হতে পারে। রেলবোর্ড সূত্রে খবর, মুম্বইয়ের সমস্ত লোকাল এসি করে করে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। রেকগুলি তৈরি হচ্ছে চেন্নাইয়ে। কিন্তু একদিকে বন্দে ভারতের কোচ, সেই সঙ্গে এসি মেট্রো এবং এসি লোকালের রেক —সব মিলিয়ে প্রচুর চাপ বেড়ে গিয়েছে চেন্নাইয়ের ‘ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি’তে। তাই রেলের পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়িত হতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে বলেই খবর। তবে রেলের ওই কর্তা কলকাতা মেট্রোর উদাহরণ টেনে বলেন, ‘দেশের মধ্যে প্রথম কলকাতায় মেট্রো চালু হয়েছিল ১৯৮৪ সালে। তখন একটিও এসি মেট্রো চলত না। আর আজ দেখুন, সবই এসি রেক। আগামী দিনে লোকালের ক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে।’