মা হতে না পারার যন্ত্রণা ভুলতে আমতায় শিশু ‘চুরি’, গ্রেপ্তার বউমা-শাশুড়ি
প্রতিদিন | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
মণিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: সন্তান না হওয়ার জ্বালা। ধীরে ধীরে হতাশার মধ্যে হারিয়ে যাওয়া! আর সেই হতাশাই পিঙ্কিকে অপরাধের দিকে ঠেলে দিল! আমতা হাসপাতাল থেকে সম্প্রতি ১১ দিনের এক শিশু চুরির অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় পিঙ্কি বাগ এবং তাঁর শাশুড়ি অর্চনা বাগকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, জেরায় পিঙ্কি স্বীকার করে নিয়েছেন সন্তান না হতাশা ঢাকতেই সে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। এমনকী কীভাবে শিশুটিকে তিনি চুরি করেছিলেন তাও জেরায় পুলিশকে জানিয়েছেন বলে খবর।
জেরায় পিঙ্কি আরও জানিয়েছেন, ছয় বছর বিয়ে হয়ে গেলেও তাঁর সন্তান হয়নি। যদিও গত জানুয়ারি মাসে গর্ভবতী হয়েছিলেন, কিন্তু এর মাঝেই গর্ভপাত হয়ে যায়! আর সেই ঘটনা সম্পূর্ণভাবে বাড়ির লোকের কাছে লুকিয়ে যান পিঙ্কি। সেটা যাতে কেউ না বুঝতে পারে, সেজন্য প্রতিনিয়ত একটা নাটক সবার সামনে চালিয়ে গিয়েছেন দিনের পর দিন। জেরায় তিনি আরও জানিয়েছেন মানসিক যন্ত্রণাকে ঢেকেই দিনের পর দিন চলে সেই নাটক। ডাক্তার দেখানো থেকে শুরু করে, সমস্ত টেস্ট করা, আশাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, সময়মতো খাওয়াদাওয়া সবটাই সে স্বাভাবিকই রেখেছিল।
জানা যায়, এই সময় এক আশাকর্মীর বাড়িতে যেতেন পিঙ্কি। প্রাথমিক অনুমান, সম্ভবত তাঁর সঙ্গেই পরিকল্পনা করেই সদ্যোজাতকে চুরি করার পরিকল্পনা পিঙ্কি করেছিলেন! আর এভাবেই মা হতে না পারার যন্ত্রণা ভুলতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেটা যে তাঁর জীবনের বড় ভুল হয়ে যাবে তা কল্পনাও করতে পারেননি। এদিকে বৌমার অপরাধের দায় ভোগ করতে হল শাশুড়িকেও। পুলিশ জানিয়েছে, শিশু চুরি করে নিয়ে ওই মহিলা এক আশা কর্মীর বাড়িতে চলে যান এবং অভিযোগ তারপরে ওই আশা কর্মী তাঁর শাশুড়িকে ফোন করে বাড়িতে আসতে বলে। সেই মতোও তিনিও আশা কর্মীর বাড়িতে যান। সেই সময় ওই আশা কর্মী অর্চনা বাগকে জানান, টোটো করে যাওয়ার সময় বাচ্চা হয়ে যায়। আর আশা কর্মী বাচ্চার নোংরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে দিয়েছে। আর সে কথা বিশ্বাসও করে নেন অর্চনা।
একেবারে ধুমধাম করে মঙ্গলবার বিকালে শাঁখ বাজিয়ে নাতি ও বৌমাকে ঘরে তুলেছিলেন আমতার মিল্কিচকের বাসিন্দা অর্চনা বাগ। তবে তখনও বুঝতে পারেননি বৌমা শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে চুরি করে নিয়ে এসেছে। যদিও বাড়িতে পুলিশ আসার পরেই আসল রহস্য ফাঁস হয়! কিন্তু কীভাবে শিশুকে চুরি করেছিলেন পিঙ্কি?
পুলিশকে পিঙ্কি জানিয়েছেন, ”মঙ্গলবার শিশুটি তার দিদিমার কোলে ছিল। কার্ড করানোর জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। পিঙ্কি শিশুটিকে ধরার নাম করে কোলে নেয় এবং কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই বেরিয়ে সোজা টোটো ধরে চলে যায়।” ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতাল চত্বরে। যদিও পিঙ্কির বাড়ি থেকেই চুরি যাওয়া শিশুটিকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার ধৃত দুজনকে উলুবেড়িয়া আদালতে তোলা হলে বিচারক পিঙ্কির ৮ দিনের পুলিশি হেফাজতের এবং অর্চনার ১৪ দিনে জেলে হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।