মুখ্যমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় এলাকায় উন্নয়নের জোয়ার, ৪২ বছর পর জুতো পরলেন দুর্গা!
প্রতিদিন | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
অরূপ বসাক, মালবাজার: গত ৪২ বছর ধরে খালি পায়েই হেঁটেছেন মাল ব্লকের তুড়িবাড়ি লিম্বু বস্তির বাসিন্দা বছর সত্তরের দুর্গা থাপা। এত বছর খালি পায়ে হাঁটার মূল কারণ এলাকার সার্বিক উন্নয়ন। তবে এবার অবশেষে জুতো পরলেন তিনি। গ্রামের উন্নয়ন অনেকটাই এগিয়েছে। তাই এই সিদ্ধান্ত বলে জানা গিয়েছে।
ছোটবেলা থেকেই দুর্গা থাপা এই গ্রামের উন্নতি চেয়েছেন। স্কুলে পড়াশোনা করার সময় তিনি ভাবেন গ্রামের উন্নতির জন্য কিছু করতে হবে। মনের মধ্যে সেই আক্ষেপ চেপে রেখেছিলেন। পরবর্তী সময়ে বিয়ে করেন এবং সংসার হয়। এত বছর পেরিয়ে গেলেও, তিনি দেখে এলাকার কোনও উন্নতি হচ্ছে না। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও গ্রামের উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হন তিনি। এরপর ২৮ বছর বয়সে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, যতদিন গ্রামের উন্নয়ন হবে না, ততদিন তিনি জুতো পরবেন না। সেই থেকেই তিনি খালি পায়েই ঘুরেছেন। বাড়ির সমস্ত কাজ খালি পায়েই করছেন। পেশায় কৃষক দুর্গা থাপার এই প্রতিজ্ঞায় অবাক এলাকার মানুষ। পাশাপাশি ওঁর এই দাবিকে স্বাগত জানিয়েছেন এলাকার সকল মানুষ। তবে সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে এবার জুতো পরলেন তিনি। কিছুদিন আগে গ্রামের একটি অনুষ্ঠানে এলাকার মানুষের অনুরোধে তিনি জুতো পরেন। আর এতেই খুশি এলাকার সব মানুষ।
এলাকার বাসিন্দারা বলেন, “আমাদের এই গ্রামের উন্নতির জন্য গত ৪২ বছর ধরে খালি পায়ে হেঁটেছেন দুর্গা থাপা। বিভিন্ন দপ্তর এবং প্রশাসনের কাছে খালি পায়েই ছুটেছেন এলাকার উন্নতির জন্য। আজ ওঁর জন্য তুড়িবাড়ি এলাকায় হয়েছে হাইস্কুল, পানীয় জল, ইলেকট্রিক এবং রাস্তাঘাট।” তাই গ্রামের মানুষ ওঁকে অনুরোধ করেন জুতো পরার জন্য। তাঁরা বলেন, “আপনার জন্য এলাকার অনেক উন্নতি হয়েছে। পাশাপাশি আপনার বয়সও বেড়েছে। তাই এবার জুতো পরুন।” গ্রামের মানুষের অনুরোধ এবং এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে একটি পুজোর মধ্যে দিয়ে দুর্গা থাপা জুতো পরেন।
স্থানীয় শিক্ষক দিবস ছেত্রী বলেন, “ওঁর প্রতিজ্ঞা আমাদের শিক্ষা দেয়। উন্নয়ন চাইলে আগে নিজে থেকে কিছু করতে হবে। শুধু দাবি করলে হবে না নিজে উদাহরণ হয়ে উঠতে হয়।” দুর্গা থাপা বলেন, “এখন আমার বয়স ৭০ বছর। ছেলেমেয়েদের বিয়ে হয়ে সবাই বাইরে থাকে। আমি, স্ত্রী আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশীরা এই ছোট্ট গ্রাম লিম্বু বস্তিতে থাকি। কৃষিকাজ এবং পশুপালন করেই চলে আমাদের সংসার। তবে আমি ৪২ বছর ধরে খালি পায়েই চলাফেরা করেছি। তার মূল কারন এলাকার উন্নয়ন। গ্রামের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন জায়গায় দাবি করেছিলাম। বর্তমানে গ্রামে অনেক কাজ হয়েছে। তাই এবার সিদ্ধান্ত বদলালাম। যার জন্য খালি পায়ে এত বছর হেঁটেছি, আমার সেই দাবি অনেকটাই পূরণ হয়েছে। তাই এবার জুতো পরলাম। আরও কিছু প্রয়োজন আছে, সেই সব যাতে দ্রুত গ্রামে হয় সেটার দিকেও লক্ষ রয়েছে।”
তুড়িবাড়ি এলাকার তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য মঞ্জুলা লামা বলেন, “এই মানুষটি গ্রামের উন্নয়নের জন্য অনেক কষ্ট করেছে। এত বছর খালি পায়ে হেঁটেছে। অবশেষে এলাকার উন্নয়নের কারণে জুতো পরলেন। সব সম্ভব হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর জন্য। গ্রাম বা শহর, মুখ্যমন্ত্রী সব জায়গায় উন্নয়নের ধারা বজায় রেখেছেন। গ্রামগঞ্জে আজ পাকা রাস্তা হয়েছে। জল এবং আলোর ব্যবস্থাও হয়েছে। সরকারের এই উন্নয়ন দেখেই অবশেষে দুর্গা থাপা পায়ে জুতো পরলেন। খুশি আমরা এবং গ্রামের মানুষ।”