• সচেতনতা বাড়াতে ফৌজদারী আইন নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনী, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা?
    আজকাল | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিতাই দে, আগরতলা: ত্রিপুরায় বিচার ব্যবস্থাকে আরও জনবান্ধব ও আধুনিক করার লক্ষ্যে দেশের মধ্যে একমাত্র রাজ্য হিসেবে বিশেষভাবে তিনটি যুগান্তকারী নয়া ফৌজদারী আইন নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এই পাঁচ দিনের বিশেষ প্রদর্শনীতে নাগরিকদের জন্য নতুন আইনগুলোর কার্যকারিতা, সুবিধা ও প্রয়োগ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। 

    পুলিশ থানা, জেলখানা, আদালত এইগুলিকে থিম আকারে বানিয়ে তুলে ধরা হয়েছে এই প্রদর্শনীতে। বুধবার আগরতলার হাঁপানিয়াস্থিত ইনডোর এক্সিবিশন হলে এই প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাঃ মানিক সাহা। তিনি বলেন, “সময়ের সঙ্গে আইন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন অপরিহার্য। যদি সময়োপযোগীভাবে কাজ না হয় বা ন্যায় বিচার যথাযথভাবে না দেওয়া হয়, তবে মানুষের মধ্যে আইনের প্রতি আস্থা কমে যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশনায় গত বছরের ১ জুলাই থেকে এই নতুন আইন প্রবর্তিত হয়েছে, যা ইতিমধ্যে সংসদে পাশও হয়েছে।”

    ডাঃ মানিক সাহা আরও বলেন, “নতুন তিনটি আইন – ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়মের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া আরও সহজতর, স্বচ্ছ এবং কার্যকর হয়েছে। এই তিনটি আইনের আওতায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে যা নাগরিক জীবনকে সরাসরি উপকৃত করবে।” 

    তিনি বলেন, “এই প্রদর্শনী আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। এখন থেকে নাগরিকরা যেকোনও সময়, যেকোনও স্থান থেকে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে অপরাধের গুরুত্ব বুঝে সাজা নির্ধারণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও, কোনও ব্যক্তি গ্রেপ্তার হলে তার নিকটতম বা পরিচিত ব্যক্তিকে অবগত করার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ তদন্তে অগ্রাধিকার এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রদান নিশ্চিত করা হয়েছে।”

    প্রফেসর সাহা বলেন, “আমরা এখন ব্রিটিশ আমল থেকে যেসব অপ্রয়োজনীয় ঔপনিবেশিক (কলোনিয়াল) আইন ব্যবহার করতাম, সেগুলি ডি-রেগুলেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাতিল করছি। নতুন আইনের মাধ্যমে সময়োপযোগী, দ্রুত ও প্রযুক্তিনির্ভর বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করছি। ত্রিপুরা যে দিক দিয়ে দেশের অগ্রণী রাজ্য, তার প্রমাণ আমরা এই প্রদর্শনী আয়োজন করে দেখাচ্ছি।”

    এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক মীনা রাণী সরকার, রাজ্যের মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অনুরাগ, স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং, অতিরিক্ত মহানির্দেশক এম রাজা মুরাগন, জি এস রাওসহ উচ্চপদস্থ অন্যান্য সরকারী কর্মকর্তারা।

    অনুষ্ঠানে টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ছাত্রী, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্রছাত্রীসহ সাধারণ জনতা অংশগ্রহণ করেন। প্রদর্শনী চলবে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই উপলক্ষে কুইজ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নতুন আইনগুলো সম্পর্কে সাধারণ মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধি এবং সচেতনতা নিশ্চিত করা হবে।

    ত্রিপুরার এই উদ্যোগের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে অভিহিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। এটি শুধুমাত্র আইনি প্রক্রিয়াকে সহজতর করেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং নাগরিক অধিকার, স্বচ্ছতা ও দ্রুত বিচার প্রক্রিয়ার মডেল হিসেবে দেশের অন্যান্য রাজ্যের জন্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়াবে।
  • Link to this news (আজকাল)