শহরের অটোতে ঘৃণার বার্তা! হিন্দিভাষীদের উদ্দেশে 'গো ব্যাক', সামাজিক মাধ্যমে বিতর্ক তুঙ্গে...
আজকাল | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: বেঙ্গালুরুতে একটি অটোরিকশার পেছনে ঘৃণামূলক বার্তা লেখা ঘিরে চরম বিতর্ক। অটোর পেছনে লেখা বার্তা ঘিরে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে শহরজুড়ে। বার্তাটি হিন্দিভাষী অটোচালকদের উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছে: 'গো ব্যাক, ইল্লিগাল হিন্দিওয়ালা অটো'স। নো পারমিট/ নো পুলিশ ভেরিফিকেশন/ নো ডিসপ্লে/ নো ব্যাজ/ নো ডিএল। মোর দ্যান ১০,০০০ অটো'স ইন কে আর পুরম অ্যান্ড মহাদেবাপুরা জোন' (GO BACK, Illegal Hindi wala autos. No permit/ no police verification/ no display/ no badge/ no DL. More than 10,000 autos in KR Puram and Mahadevapura zone।) অর্থাৎ, বেঙ্গালুরুর নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে নাকি ১০,০০০–এরও বেশি হিন্দিভাষী চালক বেআইনিভাবে অটো চালাচ্ছেন, যাদের পারমিট, পুলিশ ভেরিফিকেশন, ব্যাজ, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র- কিছুই নেই।
এই ছবি ইনস্টাগ্রামে 'নাম্মাবেঙ্গালুরু’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা ছিল,'স্যাড টু সি দিস। উই সুড নট বি দ্যাট হেটফুল টুওয়ার্ডস পিপল ওয়ার্কিং লিগালি,ফলোয়িং অল রুলস' (“Sad to see this. We should not be that hateful towards people working legally, following all rules.”) অর্থাৎ, আইন মেনে কাজ করা লোকজনের প্রতি এতটা ঘৃণা ছড়ানো উচিৎ নয়।
পোস্টটি ছড়িয়ে পড়তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল ঝড় ওঠে। বহু ব্যবহারকারী এই ঘটনায় তাঁদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অনেকেই বলেন, এই ধরনের বার্তা শুধু ঘৃণা ও বিভাজনই বাড়ায়, শহরের শান্তি নষ্ট করে। একজন মন্তব্য করে বলেন, 'এই ধরনের ঘৃণা ও অযথা দোষারোপের জন্যই মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে, যার ফলে শহরে ট্র্যাফিক বাড়ছে। বেঙ্গালুরুতে সাধারণ বোধ ও নাগরিক সচেতনতা হারিয়ে গিয়েছে। এটা শুধু ভাষা বা রাজ্যের ভিত্তিতে নয়, পুরো সমাজের সমস্যা।'
ঘটনার জেরে আরেকজন লেখেন, 'বেঙ্গালুরু এখন যেন এক সংঘাতময় অঞ্চলে পরিণত হয়েছে, খুব দ্রুত যেন এই পরিস্থিতির অবসান হয়।' একজন বলেন, 'এই মানুষগুলো এমন আচরণ করছে যেন বেঙ্গালুরু ভারতের অংশ নয়, অন্য কোনও দেশের অংশ। তাই এত ঘৃণা।'
এর প্রেক্ষিতে অনেকেই তুলে ধরেছেন, বেঙ্গালুরুর অনেক স্থানীয় অটোচালকরাও কি বৈধ ডকুমেন্ট ছাড়াই গাড়ি চালান না? একজন মন্তব্য করেন, 'মিটারে না চালানো অটোও তো বেআইনি। সব দোষ শুধু বাইরের রাজ্য বা ভাষার লোকদের ওপর চাপিয়ে দিলে চলবে না। বেঙ্গালুরুর বহু স্থানীয় চালকও লাইসেন্স ছাড়াই অটো চালান।'
তবে এই ঘটনার কিছু সমর্থনকারীও ছিলেন। একজন লেখেন, 'কর্ণাটকে কর্ণাটকরাই আগে, হিন্দিভাষীরা বেঙ্গালুরু ছেড়ে বেরিয়ে যাক। সত্য প্রকাশ করায় চালককে ধন্যবাদ। জয় কর্ণাটক।' আরেকজন বলেন, 'ওখানে ‘ইল্লিগাল’ লেখা হয়েছে, সেটা তো মিথ্যা নয়। আপনি কি বেআইনি কার্যকলাপকে সমর্থন করেন?'
এই ঘটনা শহরের মানুষের কাছে দেখিয়ে দিল ভাষা, আঞ্চলিকতা এবং অভিবাসন ইস্যুতে ভারতের বড় শহরগুলো কীভাবে অধৈর্য হয়ে উঠছে। এক সামান্য বার্তা কিংবা ছবি থেকেও কীভাবে সাম্প্রদায়িক বা ভাষাগত বিভাজন আরও তীব্র হতে পারে, বেঙ্গালুরুর এই ঘটনাই তার জ্বলন্ত প্রমাণ।