• এএসআই প্রতিবেদন...
    আজকাল | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের সংগঠিত উৎপাদন খাতে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকের সংখ্যা রেকর্ড স্তরে পৌঁছেছে। বার্ষিক শিল্প সমীক্ষা (Annual Survey of Industries – ASI) ২০২৩-২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এই খাতে মোট শ্রমিকের ৪২ শতাংশই চুক্তিভিত্তিক কর্মী। ১৯৯৭-৯৮ সালের পর এটাই সর্বোচ্চ হার। ১৯৯৯-২০০০ সালে সংগঠিত উৎপাদন খাতে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকের ভাগ ছিল মাত্র ২০ শতাংশের কিছু বেশি। তবে গত দশকে এ হার প্রায় আট শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে। ২০১৩-১৪ সালে একবার পতনের পর থেকে প্রতিবছরই ধাপে ধাপে বেড়েছে চুক্তিভিত্তিক কর্মীর সংখ্যা।

    শ্রম আইন ও শিল্প মালিকদের কৌশল নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শ্রমিকসংখ্যার এ পরিবর্তনের অন্যতম কারণ দেশের পুরনো শ্রম আইন। যেমন ১৯৪৭ সালের Industrial Disputes Act, যেখানে ১০০ জনের বেশি কর্মী নিযুক্তকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য ছাঁটাই, পুনর্বিন্যাস বা কারখানা বন্ধের আগে সরকারি অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। এতে অতিরিক্ত ব্যয় ও জটিলতা এড়াতে শিল্প মালিকেরা ক্রমেই বেশি করে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ করছেন। এভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো জনবল ব্যবস্থাপনায় নমনীয়তা ও মজুরি খরচে সাশ্রয় পাচ্ছে।

    শ্রমিকদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এই ক্ষেত্রে। চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকরা স্থায়ী কর্মীদের তুলনায় কম মজুরি পান এবং সাধারণত প্রভিডেন্ট ফান্ড, বীমা, পেনশন ইত্যাদি সামাজিক সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকেন। ফলে আয়ের স্থায়িত্ব ও সামাজিক নিরাপত্তার ঘাটতি ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে দেশীয় ভোগব্যয় ও অর্থনৈতিক ভারসাম্যেও প্রভাব পড়তে পারে। কেন্দ্র সরকার ইতিমধ্যেই আনুষ্ঠানিক চাকরি সৃষ্টিতে উৎসাহ দিতে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো Employment-Linked Incentives (ELI) Scheme। এই প্রকল্পে প্রথমবার নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা এক মাসের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ (সর্বোচ্চ ১৫,০০০ টাকা) পাবেন। পাশাপাশি নিয়োগকর্তারা দুই বছরের জন্য ভর্তুকি পাবেন এবং তা আরও দুই বছর বাড়ানো যাবে।

    আন্তর্জাতিক তুলনায় দেখা যায়, চুক্তিভিত্তিক শ্রমের চিত্র এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভিন্ন। ২০২৩ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে এই হার মাত্র ১০.৮ শতাংশ। আবার লাতিন আমেরিকার দেশগুলো—যেমন ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা—বিভিন্ন সময়ে ১০ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে। শ্রমবাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতের সংগঠিত খাতে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা দেখাচ্ছে যে এখন জরুরি প্রয়োজন চাকরি সৃষ্টি, শ্রমিক সুরক্ষা এবং উৎপাদনশীলতার মধ্যে ভারসাম্য আনার। ২০২৩ সালের ২৭ আগস্ট প্রকাশিত এএসআই-এর তথ্য স্পষ্ট করছে যে ভারতের উৎপাদন খাতে কাঠামোগত পরিবর্তন গভীর হচ্ছে এবং শ্রমবাজারে এর প্রভাব আগামী বছরগুলোতে আরও বড় আকারে দেখা দেবে।
  • Link to this news (আজকাল)