• নেপাল 'বিপ্লবের' আগুনে 'পুড়ছে' সোনাগাছি! আতঙ্কে যৌনকর্মীরা ...
    আজকাল | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক:  নেপালে তীব্র রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ছাত্র-যুবদের নেতৃত্বে আন্দোলনের জেরে হিমালয় রাষ্ট্রটিতে যেন দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। সোমবারের পুলিশ গুলিতে ১৯ জন নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি ব্যাপক জনবিক্ষোভের চাপে মঙ্গলবার পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। আন্দোলনকারীরা কাঠমান্ডুর সংসদ ভবন ঘেরাও করে, শাসক দলের কার্যালয় ভাঙচুর করে এবং শীর্ষ নেতাদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। বিতর্কিত সামাজিক মাধ্যম নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্র করে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, তা আজ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

    এই অস্থিরতার অভিঘাত এসে পড়েছে কলকাতার এশিয়ার বৃহত্তম রেড-লাইট এলাকা সোনাগাছিতেও, যেখানে আজও প্রায় ২০০ নেপালি যৌনকর্মী কাজ করেন। তাঁদের সংখ্যা আগের তুলনায় কমে গেলেও, সোনাগাছি, কালিঘাট, হাওড়া ও হুগলির ছোট ছোট কোঠাগুলোতে নেপালি নারীদের উপস্থিতি দীর্ঘদিনের বাস্তব।

    নেপালে বিমানবন্দর বন্ধ, সীমান্ত সিলগালা, টেলিযোগাযোগ কার্যত ভেঙে পড়েছে। ফলে কলকাতায় থাকা নেপালি যৌনকর্মীরা পরিবারকে ফোনে পাচ্ছেন না, টাকা পাঠাতে পারছেন না। “তিন দিন হলো মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। ফোন করলে সবসময় বলে নেটওয়ার্ক নেই। জানি না মা আদৌ নিরাপদ আছেন কিনা,” — জানালেন পূর্ব নেপালের এক যৌনকর্মী, যিনি সোনাগাছিতে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আছেন। আরেকজন ভাঙা গলায় বললেন, “প্রতি মাসে আমি আমার দুই ছেলেকে টাকা পাঠাই, যারা দাদু-দিদার কাছে পোখরায় থাকে। এই মাসে টাকা পাঠাতে পারব কিনা জানি না। না পেলে ওরা খাবে কী?”

    জীবিকার অনিশ্চয়তা ও মানসিক যন্ত্রণা গ্রাস করছে তাদের। কলকাতা থেকে পাঠানো সামান্য টাকাতেই  অনেক পরিবারের বেঁচে থাকার অবলম্বন। এখন সেই সুতোটাই ছিঁড়ে যাচ্ছে। এক যৌনকর্মীর কথায়, “আমরা যেতে চাইলে যাওয়ার পথ নেই। সীমান্ত বন্ধ, ফ্লাইট বাতিল। আমরা এখানে আটকে, ওরা ওখানে আটকে।” দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির এক সদস্য জানান, সোনাগাছির অলিগলিতে এখন উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। বহু নেপালি মহিলা ক্রমাগত মোবাইল রিফ্রেশ করছেন খবর জানার জন্য। “অনেকে বলছেন, তাঁরা জানেনই না তাঁদের পরিবার নিরাপদ কিনা।”

    ‘আমরা পদাতিক’ সংগঠনের মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায় বলেন, “যৌনকর্মীরা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তাঁদের যন্ত্রণা স্বাভাবিক। যোগাযোগ নেই, টাকা পাঠানোর নিশ্চয়তাও নেই। আমরা দ্রুত বৈঠক করব কীভাবে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করানো যায় ও টাকা পাঠানোর উপায় খুঁজে বের করা যায়।”

    দীর্ঘদিন ধরেই নেপালি নারীরা পাচারের মাধ্যমে কলকাতার যৌনপল্লিতে আসতেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কড়া সীমান্ত নজরদারি ও পাচারের প্যাটার্ন বদলানোর ফলে তাঁদের সংখ্যা কমেছে। কিন্তু যারা রয়ে গেছেন, তাঁরা একইসঙ্গে অভিবাসী ও যৌনকর্মী হওয়ার কারণে দ্বিগুণ প্রান্তিকতার শিকার। নেপালের বর্তমান অস্থিরতা তাঁদের দুর্বলতাকে আরও প্রকট করে তুলেছে।

    এদিকে উত্তরবঙ্গের পানিটাঙ্কি সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, নেপালের অশান্তি এপারের পরিস্থিতিকেও প্রভাবিত করতে পারে। তবে সোনাগাছির সংকীর্ণ অলি-গলিতে ভয় আর উৎকণ্ঠাই এখন বড় বাস্তবতা। “গ্রাহকের সামনে আমরা হাসি, মানুষ ভাবে আমরা সুখী। কিন্তু আমাদের বুক পুড়ছে। আমরা জানি না পরিবার নিরাপদ আছে কিনা,” — চোখ ভিজে উঠল ৩৫ বছরের এক নেপালি যৌনকর্মীর। নেপালের অগ্নিগর্ভ রাজনীতি আজ সোনাগাছির নারীদের জীবনকে অনিশ্চয়তা, দুঃশ্চিন্তা আর অসহায়তার অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে।
  • Link to this news (আজকাল)