সীমান্তে কাঁটাতারের পাশেই পূজিত হন মা! নদিয়ার তেহট্টের এই পুজো এক বিস্ময়
প্রতিদিন | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব সংবাদদাতা, তেহট্ট: তখনও ভাঙেনি দেশ। বসেনি কাঁটাতার। পুজো ছিল সবার। চাঁদা দিয়ে দুর্গাপুজোর ব্যবস্থা করতেন মুসলিমরাও। সে সব আজ অতীত। ভাগ হয়েছে বাংলা। পাহারা বসেছে বিএসএফের। শুধু পালটায়নি বাংলাদেশের মেহেরপুরের জমিদারের হাতে প্রতিষ্ঠিত এই দুর্গাপুজোর। নদিয়ার তেহট্ট থানার অন্তর্গত ভাটুপাড়া গ্রামের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতারের একেবারে পাশেই এই দুর্গামন্দির! একই দেওয়ালে রয়েছে বিএসএফের সেনা ছাউনিও। কাঁটাতারের বেড়া থেকে মন্দিরের দূরত্ব খুব বেশি হলে ১৫ ফুট। তাতে কী! এভাবেই পূজিত হয়ে আসছেন মা উমা।
মেহেরপুরের এক জমিদারের হাত ধরেই প্রথম দুর্গাপুজো শুরু হয় ভাটুপাড়া গ্রামে। সেই সময় ছিল না কোনও জাতিগত ভেদাভেদ। এমনও হয়েছে অর্থের অভাবে পুজো হচ্ছে না জেনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষও। চাঁদা দিয়ে পুজো করতে সাহায্য করতেন তাঁরা। যদিও এখন সময় বদলেছে। কিন্তু পুজোর রীতিতে কোনও বদল আসেনি।
ইতিহাস বলছে, বাংলা ১২৭৪ বঙ্গাব্দ, ইংরেজি ১৮৬৭ সাল থেকে শুরু হয় এই দুর্গাপুজো। গ্রামের বর্ষীয়ান মানুষজন জানাচ্ছেন, ”সেই সময় অবিভক্ত ভারতবর্ষ। সীমান্তে বসেনি কাঁটাতার। ১২৭৪ বঙ্গাব্দ, ইংরেজি ১৮৬৭ সাল থেকে এখানে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে।” স্থানীয়দের কথায়, ”পরে দেশের নিরাপত্তার কথা ভেবে পুজোর মন্দির অক্ষত রেখে কাঁটাতারের বেড়া দেয় সরকার।”
গ্রামেরই এক বাসিন্দা মানবেন্দ্র দাস বৈরাগ্য জানান, ”ঠাকুরদা গোপাল দাস বৈরাগ্যের কাছে অনেক গল্প শুনেছি। সেই সময়ে বেশ কয়েকজন বড় মাপের জমিদারের মধ্যে সুভাষ বোস একজন ছিলেন। আমাদের এলাকাটি তাঁর জমিদারির মধ্যে ছিল। তাঁর আমলে শুধু মেহেরপুরের নিজস্ব বাড়িতে দুর্গাপুজো হত।” মানবেন্দ্রবাবুর কথায়, ”সেই সময় আমাদের গ্রাম থেকে মেহেরপুর বেশ কয়েক মাইল পায়ে হেঁটে গ্রামের মানুষ জমিদার বাড়ির পুজো দেখতে যেতেন। বন্য পশুর আতঙ্ককে সঙ্গী করে গভীর জঙ্গল পেরিয়ে সেখানে যেতে হত। কিন্তু সন্ধ্যা নামার আগেই সবাই মিলে বাড়ি ফিরতে আসতে হত।”
মানবেন্দ্র দাস বৈরাগ্য আরও জানিয়েছেন, ”শারদ উৎসবের আনন্দের দিনে পায়ে হেঁটে পুজো দেখতে আসার কষ্ট অনুভব করেছিলেন তৎকালীন জমিদার। আর সে কথা মাথায় রেখেই এই ভাটুপাড়া গ্রামে পুজোর প্রচলন করেন। যার মূল মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা ছিল এই গ্রামেরই প্রয়াত গোপাল দাস বৈরাগ্য। ”