উত্তরবঙ্গে সরকারি জনসভার মঞ্চ থেকে ফের এনআরসি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তুললেন আগামী বিধানসভা ভোটের প্রসঙ্গও। বিদেশি নাগরিক আইনে সংশোধনের প্রসঙ্গ তুলে ‘সাবধান’ বার্তাও দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
বুধবার জলপাইগুড়ির অরবিন্দনগরের মাঠে সরকারি জনসভায় বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ভোটের আগে বলছো, আইন তুলে নিলাম। ভোটের পরে এনআরসি করবে।” কেন এনআরসি প্রসঙ্গ তুললেন, সেই ব্যাখাও করলেন মুখমন্ত্রী। সম্প্রতি অসম থেকে কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারের কিছু বাসিন্দা এনআরসি তথা বিদেশি নাগরিক আইনে নোটিস পেয়েছেন। নানা নথি-সহ অসমে গিয়ে বিশেষ আদালতে তাঁদের হাজিরা দিতে হয়েছে। মালদহের এক বাসিন্দাকে যথাযথ নথি না দেখেই বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছিল। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হচ্ছে।” রাজবংশীদের উপরে এনআরসি-র নাম করে অত্যাচার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ছাড়া, চা শ্রমিকেরা যাতে সকলেই ২০ শতাংশ হারে বোনাস পান, তা নিশ্চিত করতে মুখ্যসচিবকে নজরদারির নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জলপাইগুড়ির সভা থেকে তিনি এ দিন প্রায় চারশো কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন, শিলান্যাস করেছেন।
গত বিধানসভা এবং লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে বিজেপির ফলাফল তুলনামূলক ভাবে ভাল হয়েছে। আগামী বিধানসভা ভোটেও উত্তরবঙ্গের রাজবংশী এবং আদিবাসী ভোটকে পাখির চোখ করেছে বিজেপি, এমনই দাবি সূত্রের। বিজেপি, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘও উত্তরবঙ্গে বারবার বৈঠক করে চলছে। সেই আবহে উত্তরবঙ্গের রাজবংশী এবং আদিবাসীদের মুখ্যমন্ত্রী এনআরসি বার্তা দিয়ে রাখলেন বলে মনে করা হচ্ছে।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি দেখব কত অত্যাচার করতে পারে। অসম থেকে নোটিস পাঠাচ্ছে আলিপুরদুয়ারের রাজবংশীকে। অসম থেকে নোটিস পাঠাচ্ছে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়িতে। আমাদের লোকেদের বাংলায় কথা বললে বাংলাদেশে পুশব্যাক করে দেওয়া হচ্ছে। এমনকী আদিবাসী মেয়েও রেহাই পাচ্ছে না।”
সেই প্রসঙ্গেই পরিযায়ী শ্রমিকদের উপরে অত্যাচারের অভিযোগ করে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “ভোটের আগে ভয় দেখাচ্ছে। বাংলা ভাষাকে ধরে ধরে মারছে। বাংলা বলায় পরিযায়ী শ্রমিকদের উপরে অত্যাচার করছে। আমি বলব, আরও বেশি করে বাংলায় কথা বলুন।”
উত্তরবঙ্গের বন্যা নিয়েও কেন্দ্রকে বিঁধেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ভুটান থেকে আসা নদীর জলে উত্তরবঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বারবার বলেছি ইন্দো-ভুটান নদী কমিশনে বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হোক৷ ভুটানের জলে উত্তরবঙ্গে বন্যা হয়। ডিভিসির জলে দক্ষিণবঙ্গে। উত্তরপ্রদেশ, বিহারের জলে আমাদের গঙ্গা এখন টুবুটুবু হয়ে আছে। কেন্দ্র অসমে বন্যা নিয়ন্ত্রণে অর্থ দেয়, আমাদের রাজ্যকে দেয় না।”
জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায় বলেন, “কেন্দ্র যা টাকা দেয়, রাজ্যে অপচয় হয়। নেতা-নেত্রীদের পকেটে যায়। হিসেব চাইলে দেয় না। প্রতি বছর বন্যা হয়, অথচ বন্যা নিয়ন্ত্রণের সার্বিক পরিকল্পনা হয় না। কারণ বন্যা হলেই অর্থ আসবে।”