হাওড়ার দাশনগরের আরতি কটন মিলে দীর্ঘ দিন ধরেই বেতন বন্ধ। পুজোর আগে বোনাসও পাননি শ্রমিকেরা। সেই আবহে এ বার বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের গাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখালেন তৃণমূল সমর্থিত শ্রমিকদের একাংশ। তৃণমূল বিধায়ক তথা ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারির নেতৃত্বে শমীককে ঘিরে দেখানো হল বিক্ষোভ। পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকায় পৌঁছোয় বিশাল পুলিশবাহিনী। নামানো হয় র্যাফও।
বৃহস্পতিবার হাওড়ার দাশনগরে আরতি কটন মিলের মাঠে ‘নরেন্দ্র কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট’ উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন শমীক। কিন্তু অনুষ্ঠানমঞ্চে পৌঁছোনোর আগেই বিজেপির রাজ্য সভাপতির গাড়ি ঘেরাও করে তৃণমূল। মিলের কর্মীদের বেতন সংক্রান্ত একাধিক দাবিদাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে তারা। ঘটনাস্থলে ছিলেন মনোজ। তাঁরই নেতৃত্বে শমীকের গাড়ি ঘিরে চলে বিক্ষোভ। পাল্টা স্লোগান দিতে শুরু করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরাও। মাঠে ঢোকার মুখে এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে এসে পৌঁছোয় বিশাল পুলিশবাহিনী।
কিছু ক্ষণ বিক্ষোভ চলার পরে মনোজ এগিয়ে যান শমীকের সঙ্গে কথা বলতে। শমীক প্রশ্ন করেন, নিজে একজন খেলোয়াড় হয়ে কেন খেলা বন্ধ করতে চাইছেন মনোজ। জবাবে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জানান, তাঁরা খেলা বন্ধ করতে আসেননি। কিন্তু যে মিলের মাঠে এই খেলার আয়োজন করা হয়েছে, সেই মিল বেশ কিছু দিন ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। বকেয়া রয়েছে কর্মীদের বেতন। পুজোর মরসুমে বোনাস তো দূর, মিলছে না বকেয়া টাকাও। সেই শ্রমিকদের কথা না ভেবে মিলের মাঠে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করছে বিজেপি, এটা মেনে নেওয়া যায় না! সে সব দাবি নিয়েই তাঁরা এসেছেন বলে জানান মনোজ। উত্তরে শমীক আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘‘আমিও এই বিষয় নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তুলেছি। কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের সঙ্গেও বাংলার এই সব মিলের পুনরুজ্জীবনের বিষয়ে কথা হয়েছে। এই মিলগুলির আধুনিকীকরণ দরকার। তার জন্য কেন্দ্রের প্রকল্প রয়েছে। কেন্দ্র টাকাও দেবে। কিন্তু রাজ্যকেও এগিয়ে আসতে হবে। যৌথ উদ্যোগ ছাড়া কাজ হবে না।’’ শেষমেশ মনোজের সঙ্গে শমীকের কথা হওয়ার পর বিক্ষোভকারীরা ক্ষান্ত হন। শমীক যেহেতু বস্ত্র মন্ত্রক সংক্রান্ত একটি সংসদীয় কমিটির সদস্য, তাই তিনি এই কটন মিলের সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এমনটাই দাবি বিজেপি সূত্রের।
তবে দুই নেতার বাগ্বিতণ্ডা তেমন গড়ায়নি। বেশি ক্ষণ শমীককে আটকে রাখেননি মনোজেরা। শমীকও আর মনোজকে আক্রমণের পথে হাঁটেননি। তিনি বলেন, ‘‘আজ স্বামীজির শিকাগো বক্তৃতার দিন। সেই দিন উপলক্ষে নরেন্দ্র কাপ উদ্বোধন করতে এসেছি। এখানে কোনও রাজনৈতিক কথা বলতে চাই না।’’ তবে মনোজ বলেন, ‘‘নির্বাচনের আগে বিজেপি মানুষের পাশে থাকার ভান করছে। আগে উৎপাদন শুরু করুন, তার পর টুর্নামেন্ট করুন। খেলায় আপত্তি নেই, কিন্তু শ্রমিকের অধিকারের কথাও ভাবতে হবে।’’