বাংলা ভাষার অপমান ও বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থার অভিযোগ তুলে বিজেপির বিরুদ্ধে টানা প্রচার চালাচ্ছে তৃণমূল। এর মোকাবিলায় এ বার ‘বাঙালি অস্মিতা’কে সামনে রেখে ফুটবলে জনসংযোগ বাড়াতে মাঠে নামছে বিজেপি।
স্বামী বিবেকানন্দ থেকে শ্যামাপ্রসাদ, সুভাষচন্দ্র থেকে মা সারদা— বাঙালির আবেগ জড়ানো এমন নানা নামে নতুন নতুন ক্লাব তৈরি করে আজ, বৃহস্পতিবার থেকে পুরুলিয়ায় ‘নরেন্দ্র কাপ’ ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু করতে যাচ্ছে বিজেপি। তৃণমূলের দাবি, স্মরণীয় বাঙালিদের শ্রদ্ধা জানানো বা খেলাধূলার প্রসার নয়, ভোট-অঙ্কে ক্লাবগুলিকে কাছে টানতেই বিজেপির এই কৌশল। বিজেপির পাল্টা কটাক্ষ, সবাইকে নিজেদের মতো ভাবছে তৃণমূল।
পুরুলিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সচরাচর যে মাঠে প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক সভা করেন, সেই পুরুলিয়া ১ ব্লকের হুটমুড়া ফুটবল ময়দানেই নরেন্দ্র কাপের আয়োজন করেছে বিজেপি। অতীতে এমপি কাপ টুর্নামেন্ট-ও করেছে বিজেপি। তবে সেই ম্যাচগুলি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন ব্লক ও শহরে হয়েছে। সাড়াও ভাল মিলেছিল। তবে এক সপ্তাহ ধরে নরেন্দ্র কাপ শুধু এই মাঠেই হবে। পুরুলিয়া সাংগঠনিক জেলার পুরুলিয়া, বলরামপুর, বাঘমুণ্ডি, জয়পুর, মানবাজার, কাশীপুর ও পাড়া— এই সাত বিধানসভার প্রতি মণ্ডল থেকে ৩৬টি দল গড়া হয়েছে। ক্লাবগুলি নামকরণ হয়েছে মা সারদা, স্বামী বিবেকানন্দ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নামে। রয়েছে ভারতীয় জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় থেকে বিজেপির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর নামে ক্লাবও। আদিবাসীদের কাছে টানতে সাঁওতাল বিদ্রোহের নেতা সিধো-কানহো এবং পুরুলিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের দুই শহিদ চুনারাম-গোবিন্দের নামেও ফুটবল ক্লাব গড়া হয়েছে।
গেরুয়া শিবির রাখঢাক না করেই জানাচ্ছে, তরুণ প্রজন্মকে কাছে টানতে রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশেই এই টুর্নামেন্ট হচ্ছে। এমপি ক্লাবের সাফল্য দেখে তারা নরেন্দ্র কাপ নিয়েও আশাবাদী। তবে এমপি ক্লাবে বিভিন্ন ক্লাব যোগ দিয়েছিল। নরেন্দ্র কাপে বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৮-২৫ বছর বয়সি সেরা খেলোয়াড়দের খুঁজে এনে দলের মণ্ডল ভিত্তিক ক্লাব গড়া হয়েছে। বিজেপির পুরুলিয়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শঙ্কর মাহাতোর দাবি, ‘‘ক্লাবগুলির নাম ঠিক করেছেন সংশ্লিষ্ট মণ্ডলের নেতা-কর্মীরা।’’ মানবাজার ৪ মণ্ডল যেমন শহিদ চুনারাম-গোবিন্দর স্মৃতিতে ক্লাবের নাম দিয়েছে। পাড়া ২ মণ্ডল তৈরি করেছে ‘সিধো-কানহো’ ফুটবল ক্লাব। বাঘমুণ্ডি ১ ও কাশীপুর ২ মণ্ডল নাম রেখেছে শ্যামাপ্রসাদ, পুরুলিয়া ২ মণ্ডল অটলবিহারীর নামে। পুরুলিয়া ৪ দিয়েছে বিজেপির সাম্প্রতিককালের জনপ্রিয় স্লোগান ‘জয়শ্রীরাম’। তবে ক্লাবের নামে সব চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বিবেকানন্দ, তারপরেই সুভাষচন্দ্র।
তবে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বেলথরিয়ার দাবি, ‘‘বাংলা ভাষাকে অপমান করে, বাঙালি শ্রমিকদের হেনস্থা করে এখন বাঙালি মনীষীদের নাম ব্যবহার করা বিজেপির দ্বিচারিতা। আমরাই ফুটবলের বিভিন্ন ক্লাব তৈরি প্রথম টুর্নামেন্ট শুরু করেছিলাম। আমাদের নকল করছে বিজেপি।’’ যদিও বিজেপির পাড়ার বিধায়ক নদীয়ারচাঁদ বাউরির দাবি, ‘‘তৃণমূল ক্লাবগুলিকে দলের স্বার্থে ব্যবহার করছে। আমরা চাইছি, স্থানীয় ভাল খেলোয়াড়দের নিয়ে ক্লাব করে তাঁদের খেলার প্রতি আরও মনোযোগী করে তুলতে।’’ সৌমেনের আরও দাবি, ‘‘বিজেপি পুরুলিয়ায় জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। টাকা-পয়সার প্রলোভন দেখিয়ে কোনও রকমে দল গড়েছেন বিজেপির স্থানীয় নেতারা।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি শঙ্করের পাল্টা দাবি, উৎসাহ দিতে ফুটবল ও জার্সি দেওয়া হচ্ছে মাত্র।