• পুজোয় বালুচরির আঁচলে ফিরছে পুরাতনী নকশা
    আনন্দবাজার | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • বালুচরি শাড়ির আঁচল থেকে ফুল- পাতার নকশাকে সরিয়ে দীর্ঘদিন রাজত্ব করেছে রামায়ণ, মহাভারত-সহ পৌরাণিক কাহিনির দৃশ্য। কিন্তু সব ধর্মের মানুষের কাছে বালুচরিকে পৌঁছে দিতে ফের ফুল-পাতার নকশাকেই ফিরিয়ে আনছেন বিষ্ণুপুরের তাঁতশিল্পীরা। এ বার পুজোয় তেমন শাড়ির চাহিদা তুঙ্গে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও।

    কেন এই পরিবর্তন? নানা মত উঠে আসছে তাঁতশিল্পীদের কাছ থেকে। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত বিষ্ণুপুরের বালুচরি শিল্পী চন্দন দে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু ধর্মের নানা কাহিনি নির্ভর বালুচরি শাড়ি বুনে আসছি। কিন্তু ক্রেতাদের কাছে এই ধরনের শাড়ি একঘেঁয়েমি হয়ে গিয়েছে। আবার এই ধরনের শাড়ি অন্য ধর্মের মহিলারা পরতে চান না। তাই ধর্মীয় সমন্বয়ের কথা ভেবে প্রকৃতি-নির্ভর নকশায় জোর দিয়েছেন শিল্পীরা। এই সব শাড়ির দাম ১৩ হাজার টাকা।’’

    তুলনায় কাহিনি-নির্ভর বালুচরিতে পরিশ্রম বেশি, দামও তাই বেশি। বিষ্ণুপুরের বৈষ্ণবপাড়ার তাঁতশিল্পী রাধেশ্যাম রজকের কথায়, ‘‘রাজা দুষ্মন্ত ও শকুন্তলার কাহিনির ছবি দেওয়া একটি বালুচরি শাড়ি বুনতে দু’জন শিল্পীর ১০ দিন সময় লাগে। সে বাবদ মজুরি পড়ে ১০ হাজার টাকা। কাঁচামালের খরচ পাঁচ হাজার টাকা। তাই এই শাড়ির দাম ২০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু হয়।’’ তবে সরকারি ভাবে বালুচরির নকশা পাওয়া গেলে শাড়ির দাম কয়েক হাজার টাকা কমানো সম্ভব। আবার বালুচরি শিল্পী গোবর্ধন পাল জানাচ্ছেন, বাইরের রাজ্যের বাজার পেতেও পুরাণ নির্ভর শাড়ির নকশা কিছুটা বাধা ছিল। তাঁর মতে, ‘‘পুরাণের কাহিনির নকশা যুক্ত বালুচরি শাড়ি ভিন্‌ রাজ্যের হিন্দু মহিলারাও অনেক সময় কিনতে রাজি হচ্ছেন না। ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা থেকে তাঁরা দেবদেবীর নকশা করা শাড়ি পড়তে চাইছেন না। তাই ধীরে ধীরে অনেক শিল্পী কাহিনী ছেড়ে প্রাচীন লতা-পাতার নকশার দিকেই ঝুঁকছেন।’’

    বিষ্ণুপুরের শেখপাড়ার বাসিন্দা আয়েশা বিবি, কাটানধারের রুবিয়া বিবি বলেন, ‘‘পশু-প্রাণী বা ধর্মীয় কাহিনির ছবি দেওয়া বালুচরি আমরা ব্যবহার করি না। তবে লতা-পাতা ও ফুলের নকশার বালুচরি তৈরি হচ্ছে শুনে আমরা খুশি।’’ তবে পৌরাণিক কাহিনির ছবি দেওয়া শাড়ির কদরও হারায়নি। বড়কালীতলার তাঁতশিল্পী তপন পাল জানান, বিদেশের বাঙালিনীরা কাহিনি নির্ভর বালুচরিই বেশি পছন্দ করেন। এ বারও অনলাইনে অনেকে ওই সব শাড়ির বরাত দিয়েছেন।

    মহকুমা শাসক (বিষ্ণুপুর) প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, “বালুচরি শাড়ির নকশা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা অব্যাহত। বিষ্ণুপুর কে জি কলেজের বালুচরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্যোগে পুজোর আগেই আসছে এক লক্ষ টাকা মূল্যের ‘করম পরব’-এর নকশা দেওয়া শাড়ি।’’ তিনি জানান, ডিজিটাল মাধ্যমে কম সময়ে ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিভিন্ন রকমের নকশা তৈরি করা যাবে। অর্ধেক দামে নকশা পাবেন বালুচরি শিল্পীরা।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)