সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি; স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশনের নথি-তালিকায় কেন রেশন কার্ডকে মান্যতা দেওয়া হয়নি, তার উত্তর স্পষ্ট হচ্ছে। নাগরিকত্ব দূরঅস্ত, ক্রমেই রেশন কার্ড আর পরিচয়পত্র হিসেবেও গ্রাহ্য হবে না। সেই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। নরেন্দ্র মোদির সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আয়করদাতারা রেশন তো পাবেনই না, একইসঙ্গে রেশনে সস্তায় অথবা বিনামূল্যে খাদ্যশস্য পাওয়ার যোগ্যতা যাঁদের নেই, সেইসব কার্ড বাতিলও করে দেওয়া হবে। রাজ্যগুলিকে এই মর্মে পদক্ষেপ নিতে বলছে কেন্দ্র। করদাতাদের সংখ্যা এবং আয়সীমার বিস্তারিত তথ্য সেন্ট্রাল বোর্ড অব ডিরেক্ট ট্যাক্সেস ও আয়কর বিভাগের থেকে নিয়েছে কেন্দ্র। এবার সেই তথ্য মিলিয়ে দেখা শুরু হয়েছে রেশন কার্ড গ্রাহকদের তালিকার সঙ্গে। কেন্দ্রীয় খাদ্য ও গণবণ্টন দপ্তর দেখছে, কতজন আয়করদাতার রেশন কার্ড রয়েছে এবং কারা কত টাকা কর দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে ১ কোটি ১৭ লক্ষ কার্ড চিহ্নিত হয়েছে। সেগুলিকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই উপভোক্তা তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কেন্দ্রের দাবি, এই কার্ড হোল্ডারদের খাদ্য সুরক্ষা আইন অনুযায়ী কোনওরকম রেশন পরিষেবা পাওয়ার কথাই নয়। তাই এই সব কার্ড বাতিল হবে। এখানেই শেষ নয়। এই তালিকা তৈরির পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে রেশন কার্ড গ্রাহকদের সামাজিক ও জীবিকাগত স্টেটাস দেখা হবে।
রেশনের সুবিধা গ্রহণ করছেন অথচ আয়করও দিচ্ছেন, আয়কর বিভাগের তথ্য অনুযায়ী এমন নাগরিকের সংখ্যা ৯৪ লক্ষ ৭১ হাজার। কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রক থেকে তথ্য নিয়ে খাদ্যমন্ত্রক দেখেছে, ৫ লক্ষ ৩১ হাজার এরকম রেশন কার্ড গ্রাহক রয়েছেন, যাঁরা কোনও না কোনও সংস্থার মালিক। আবার সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রক থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গিয়েছে, ১৭ লক্ষ ৫১ হাজার রেশন কার্ড গ্রাহকের গাড়িও রয়েছে। জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন অনুযায়ী, যারা বিনামূল্যে এবং সস্তায় রেশন পাওয়ার অধিকারী, তারাই হবে রেশন কার্ড গ্রাহক। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সরকারি কর্মী, করদাতা, গাড়ি মালিকরাও রেশনে খাদ্য নিয়ে চলেছেন।
সিবিডিটি এবং আয়কর দপ্তরের তৈরি করা ডেটাব্যাংকে প্রথম ধাপের পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ধাপের তথ্য তৈরি হচ্ছে। কেন্দ্র নির্দেশিকা জারি করছে, নিজেরাই নিজেদের রেশন কার্ড সারেন্ডার করুন। নচেৎ জরিমানার মুখে পড়তে হবে। অবৈধ রেশন কার্ড বাতিল হলে সেই জায়গায় সুযোগ পাবেন গরিব মানুষ। সত্যিই যাঁরা বিনামূল্যে রেশন পাওয়ার যোগ্য। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে প্রায় সাড়ে ১০ কোটি আয়কর রিটার্ন জমা হয়েছে। যদিও আয়কর রিটার্ন দিলেই যে তাঁরা সকলেই করদাতা, এমন নয়। জিরো ট্যাক্স রিটার্ন হয় লক্ষ লক্ষ। তাই কারা আয়কর দিয়েছেন, সেই তথ্যই জানতে চেয়েছে খাদ্যমন্ত্রক। শুধুমাত্র দিল্লির মতো হাই প্রোফাইল শহরেই ৬ লক্ষ ৭২ হাজার রেশন কার্ড পাওয়া গিয়েছে। তাঁরা জমি মালিক, ব্যাংকে তাঁদের প্রচুর টাকা, নিজস্ব সংস্থা, কিংবা উচ্চপদে চাকরিরত। তাঁরাও বিনামূল্যে রেশন সুবিধা নিচ্ছেন। এই প্রবণতা দেশজুড়ে। তাই করদাতা হলে রেশন মিলবে না এবং কার্ডও বাতিল হবে।