নয়াদিল্লি: দেশে এখন উৎসবের আবহ। সামনেই দুর্গাপুজো-নবরাত্রি। সেই উৎসবের মরশুমকে রক্তাক্ত করতে দেশজুড়ে নাশকতার ছক কষেছিল আইএস জঙ্গিরা। তবে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের তৎপরতায় বানচাল হয়ে গেল সেই প্ল্যান। গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে চার রাজ্যে লাগাতার অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পাঁচ আইএস জঙ্গিকে। বাজেয়াপ্ত আইইডি তৈরির বিপুল সরঞ্জামও। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে গত মঙ্গল ও বুধবার রাজধানীর পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড এবং তেলেঙ্গানায় বিভিন্ন এলাকায় হানা দেয় দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল। সেই অভিযানেই তদন্তকারীদের জালে ধরা পড়েছে আইএস স্লিপার সেলের ওই পাঁচ সদস্যকে। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, ধৃতরা পাকিস্তানের মদতে দেশে খিলাফত মডেলে কাজকর্ম চালাচ্ছিল। এরা সকলে মৌলবাদী আদর্শে দীক্ষিত।
বৃহস্পতিবার জঙ্গিদের সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্য প্রকাশ করেছে দিল্লি পুলিশ। অ্যাডিশনাল কমিশনার (স্পেশাল সেল) প্রমোদ কুশওয়া বলেন, ‘দুই পর্যায়ে নাশকতার পরিকল্পনা ছিল ধৃতদের। প্রথম পর্যায়টি ছিল খিলাফতের আদর্শে জঙ্গি দল বা লস্কর গঠন। তারপর সেই জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হলে গাজওয়া-ই-হিন্দ স্টাইলে জেহাদ বা হামলা। এরজন্য দীর্ঘ প্রস্তুতিও সেরে রাখা হয়। এছাড়া পাকিস্তানি হ্যান্ডলারদের নির্দেশে ‘টার্গেটেড কিলিং’য়ের জন্যও এরা তৈরি ছিল। ধৃতদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, সালফার পাউডার, সালফিউরিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড, সোডিয়াম বাইকার্বোনেট, পিএইচ চেকার এবং বল বিয়ারিং উদ্ধার হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে আইইডি তৈরির অন্যান্য সরঞ্জাম, ইলেক্ট্রিক তার, মাদারবোর্ড, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, এমনকী রেসপিরেটরি মাস্কও।
কীভাবে এই স্লিপার সেলের সন্ধান মিলল? সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছ থেকেই এসেছিল সতর্কবার্তা—উৎসবের মরশুমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার এবং নাশকতার চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করেছে জঙ্গিরা। নির্দিষ্ট কয়েকজনের সন্দেহজনক গতিবিধির খবর পাওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। মঙ্গলবার প্রথম ব্রেক আসে দিল্লিতে। আবু বকর ওরফে সুফিয়ান এবং আফতাব আনসারিকে জালে তোলে পুলিশ। সম্প্রতি মুম্বই থেকে দিল্লি এসেছিল দু’জনে। তখনই গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর একে একে তেলেঙ্গানার নিজামাবাদ থেকে হুজাইফা ইয়ামেন এবং মধ্যপ্রদেশের রাজগড় থেকে কামরান কুরেশিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রাঁচি থেকে ধৃত আশার দানিশকেই এই চক্রের ‘মাথা’ বলে দাবি করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ধৃতরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখত বলে জানিয়েছে তদন্তকারীরা।
আশার দানিশ আদতে বোকারোর বাসিন্দা। গত দেড় বছর ধরে রাঁচিতে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকত। ইংরেজিতে স্নাতক সপ্রতিভ এই যুবক পেশায় একটি এনজিওর কর্তা। প্রমোদ কুশওয়ার কথায়, ‘সে নিজেকে সিইও বলে পরিচয় দিত। আসলে এটি একটি কোড নেম। নিজের জঙ্গি গোষ্ঠীতে তার আরও একটি কোড নেম ছিল, ‘গাজওয়া’। এনজিও-র নামে সে একটি জমি হাতানোর পরিকল্পনা করেছিল। এরা সব মৌলবাদী আদর্শে দীক্ষিত।’ ধৃত দানিশ বোমা তৈরিতে দক্ষ বলেই পুলিশের দাবি।