বাংলার প্রাপ্য এখনও বন্ধ কেন? ১০০ দিনের কাজে কেন্দ্রের জবাব চাইল পিএসি
বর্তমান | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: গুজরাতের মন্ত্রীর ছেলে ১০০ দিনের কাজে ৭১ কোটি টাকার দুর্নীতির দায়ে জেলে গিয়েছে। তারপরও ওই রাজ্যে কটা দল গিয়েছে? এই পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসা সত্ত্বেও কীভাবে টাকা পাচ্ছে ডাবল ইঞ্জিন গুজরাত? অথচ বাংলায় এই প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল মাত্র ৪ কোটি ৯১ লক্ষ টাকার কাজ নিয়ে। সেই জায়গায় ৫ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে ফেরত দিয়েছে রাজ্য। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ৭৮ জন আধিকারিকের বিরুদ্ধে। তা সত্ত্বেও কেন বন্ধ করে রাখা হয়েছে বাংলার ন্যায্য প্রাপ্য? এই প্রশ্নেই বৃহস্পতিবার কলকাতায় উত্তাল হয়ে উঠল সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) বৈঠক। এই ধরনের একাধিক প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হলেন কেন্দ্রের সচিব পর্যায়ের আধিকারিকরা। এখানেই শেষ নয়, গুজরাতের দুর্নীতি নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন মোদি-শাহেরই রাজ্যের সাংসদ তথা পিএসির অন্যতম সদস্য শক্তিসিন গাহিল। কমিটির একাধিক সদস্য প্রশ্ন তুললেন বাংলার টাকা আটকে রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে। তবে এই সমস্ত প্রশ্নের কোনও সন্তোষজনক উত্তর কেন্দ্রের আধিকারিকরা দিতে পারেননি বলেই বিশেষ সূত্রে খবর। তার জেরেই পশ্চিমবঙ্গের ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রাখা নিয়ে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মোদি সরকারের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রককে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পিএসি।
কংগ্রেস সাংসদ কে সি ভেনুগোপালের নেতৃত্বাধীন এই কমিটির সঙ্গে এদিন পিএসির স্টাডি ট্যুরের বৈঠকে কেন্দ্রীয় আধিকারিকদের পাশাপাশি যোগ দিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ সহ একাধিক পদস্থ কর্তাও। শহরের একটি পাঁচতারা হোটেলে বসেছিল বৈঠক। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ সুখেন্দু সেখর রায়, সৌগত রায় সহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরাও। রেল, কয়লার মতো ইস্যু নিয়ে একাধিক কেন্দ্রীয় সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করার পাশাপাশি রাজ্যের শুধুমাত্র ১০০ দিনের কাজের বিষয় নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে খবর।
২০২২ সালের মার্চ মাস থেকে বাংলার ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছে মোদি সরকার। এমনকী কলকাতা হাইকোর্ট ১ আগস্ট থেকে কাজ চালুর নির্দেশ দেওয়ার পরেও কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়নি কেন্দ্র। উল্টে ১ আগস্টের কিছুদিন পরে হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে তারা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। ফলে একদিকে ১ আগস্ট কাজ শুরু না করা এবং তার বেশ কিছুদিন পর শীর্ষ আদালতে যাওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টকে অবমাননা করা হয়েছে বলেও এদিনের বৈঠকে পিএসির কয়েকজন সদস্য মত প্রকাশ করেছেন।
রাজ্যের রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের সর্বাধিক জবকার্ড বাংলাতেই আধার কার্ডের সঙ্গে সংযোজিত হয়েছে। আবার ভুয়ো কার্ডের নিরিখেও বাংলার থেকে অনেক বেশি কার্ড বাতিল হয়েছে একাধিক ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যে। তাহলে কেন বাংলার টাকা বন্ধ? এই প্রশ্নেরও সম্মুখীন হতে হয়েছে কেন্দ্রের আধিকারিকদের। প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে বাংলার টাকা বন্ধ থাকায় শুধু এই প্রকল্পেই আগের বকেয়া সহ বর্তমানে প্রাপ্য পৌঁছেছে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকায়। বাংলার প্রতি এই বঞ্চনার উত্তরে এখন পিএসিকে কেন্দ্র কী জবাব দেয়, সেদিকেই নজর রয়েছে সব মহলের। তবে, এবিষয়ে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণেই বিরোধী রাজ্য বাংলাকে ভাতে মারছে মোদি সরকার। সেই ধারা কি এরপরও বজায় থাকবে?