পর্যটকদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত কালিম্পং, কার্শিয়াং, দুর্গোৎসবে অঞ্জলি এবং ভোগের ব্যবস্থা প্রাচীন দুই পুজো কমিটির
বর্তমান | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সুব্রত ধর, শিলিগুড়ি: জেন-জি বিদ্রোহে জেরবার নেপাল। হিমালয়ের কোলে থাকা এই প্রতিবেশী রাষ্ট্র এখন জ্বলছে। তাই পুজোয় পর্যটকদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত উত্তরবঙ্গের দু’টি পাহাড়, কার্শিয়াং ও কালিম্পং। ইতিমধ্যে দুই পাহাড়ের প্রাচীন দু’টি পুজো কমিটি দশভুজার আরাধনার প্রস্তুতি শুরু করেছে। তারা পর্যটকদের জন্য অঞ্জলি দেওয়া ও ভোগ বিলির ব্যবস্থাও করছে। ভোগে রয়েছে বৈচিত্র। সঙ্গে থাকছে মালদহের ঢাকিদের কলাকৌশল ও ধুনুচি নৃত্য প্রতিযোগিতা। যারমধ্যে একটি শতবর্ষ প্রাচীন পুজো। শুধু তাই নয়, ঐতিহ্য মেনে দুই পুজোতেই দশভুজার কাছে বলি দেওয়া হয় চালকুমড়ো, আখ ও কলা। পুজোর উদ্যোক্তাদের দাবি, বিগত বছরগুলির তুলনায় এবার পুজোয় পর্যটকদের ভিড় বেশি হবে। সেই মতো প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
ওই দু’টি পুজোর মধ্যে কালিম্পংয়ের বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের পুজো অন্যতম। রাজরাজেশ্বরী হলে সেই পুজো হয়। ব্রিটিশ আমলে কার্শিয়াংয়ে কোনও পুজো হতো না। তিনধারিয়ায় পুজো হতো। দশমীর দিন কার্শিয়াং স্টেশনে প্রতিমা আসত। কার্শিয়াংয়ের বাঙালিরা সেখানে গিয়ে প্রতিমা দর্শন করতেন। এরপর ১৯১৬ সালে কার্শিয়াংয়ে দুর্গাপুজোর সূচনা করে বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন।
প্রায় সাত বছর আগে রাজনৈতিকভাবে অশান্ত হয়েছিল পাহাড়। তখন শতাব্দী প্রাচীন ওই হল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পুরনো আদল বজায় রেখে হলটি নির্মাণ করে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর। এবারও সেখানে পুজো হবে। স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদের পুজোয় শামিল করতে তৎপর পুজোউদ্যোক্তারা।
পুজো কমিটির সভাপতি চন্দন কর্মকার বলেন, এবার পুজোর ১০৯ তম বর্ষ। এটা পাহাড়ের অন্যতম প্রাচীন পুজো। শতাব্দী প্রাচীন এই পুজোয় এবার পর্যটকদের ঢল নামবে বলেই আশা করছি। তাঁদের আপ্যায়নে কোনও ত্রুটি রাখা হবে না।
আরএকটি কালিম্পং সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটি। এই পুজোর পরিচালনায় মিলনী ক্লাব। ১৯২৮ সালে এই পুজোর সূচনা হয়। এবার এই পুজোর ৯৭তম বর্ষ। এখানেও স্থানীয়দের পাশাপশি শামিল হন পর্যটকরা। এবার পুজোয় এদের থিম ‘সোশ্যাল ইউনিটি’। ব্যানার, ফ্লেক্স ও পোস্টারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বার্তা দেওয়া হবে। পুজো কমিটির সদস্য সুব্রত মান্না বলেন, এটা শুধুমাত্র বাঙালিদের পুজো নয়। এই পুজোয় নেপালি, ভুটিয়া, লেপচা, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষ অংশ নেয়। এতে শামিল হন পর্যটকরাও। এই পুজো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির। তাই এবার পুজোয় সোশ্যাল ইউনিটি নিয়ে বার্তা দেওয়া হচ্ছে।
দু’টি পুজোর রীতি, ভোগ বৈচিত্র প্রায় একই। পুজোর উদ্যোক্তারা বলেন, প্রতিমা থাকছে সাবেকি। নবমীতে দশভুজার কাছে চালকুমরো বলি দেওয়া হবে। অষ্টমীতে স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদের অঞ্জলি দেওয়া, পুজো দেখার ব্যবস্থা থাকবে। দুই জায়গাতেই দেখা যাবে মালদহের ঢাকিদের কলাকৌশল ও ধুনুচি নৃত্য। কালিম্পংয়ে চন্দননগরে, কার্শিয়াংয়ে চালসার পুরোহিত মন্ত্রোচ্চরণ করবেন। দুই জায়গাতেই ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত ভোগে থাকবে নানা পদ। খিচুড়ি, ঘণ্ট, বিভিন্নরকম ভাজা, চাটনি, সন্দেশ, লাড্ডু, কয়েক রকম মিষ্টি, লুচি, পায়েস প্রভৃতি থাকবে।
উদ্যোক্তারা বলেন, অশান্তিতে জেরবার প্রতিবেশী রাষ্ট্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত। তাই পুজোয় এই দুই পাহাড়ে পর্যটকদের ভিড় বাড়বে বলেই আশা করছি। তাঁদের যাতে কোনও সমস্যা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে। স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদের মধ্যেও বিলি করা হবে ভোগ। • কালিম্পংয়ের বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের পুজোয় থাকে ভোগের ব্যবস্থা। - ফাইল চিত্র।