• সেনবাড়ির পুজোয় অঞ্জলি দিতেন গনিখানও
    বর্তমান | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • তারক চক্রবর্তী, মালদহ: বর্ধমানের কাটোয়া শ্রীখণ্ডে প্রায় ২৫০ বছর আগেও পুজো হতো দেবী দুর্গার। ছিল বলিপ্রথা। পুরো শাক্তমতে দেবী দুর্গার পুজো হতো ওই এলাকায়। তবে স্বপ্নাদেশে সেই পুজো বর্ধমান থেকে চলে এসে ১৭১ বছর ধরে হয়ে আসছে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আশ্রয় ভিটে মালদহের কোতোয়ালির সেনবাড়িতে। এখানে আসার পর উঠে যায় বলিপ্রথা। ঐতিহ্যবাহী মালদহের কোতোয়ালি সেনবাড়ির পুজো আজও ধুমধাম ও নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন বাড়ির সদস্যরা। 

    কথিত আছে, প্রায় ৪৫০ বছর আগে বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারে ভারত ভ্রমণে বেরিয়ে নদীপথে মালদহে এসেছিলেন শ্রীচৈতন্য। কালিন্দ্রী নদী বেয়ে তাঁর নৌকা সন্ধেবেলায় কোতোয়ালির ব্রাহ্মণপাড়া পার হচ্ছিল। তবে রাতের অন্ধকারে যাত্রা না করে খানিকটা বিশ্রাম করতে চান মহাপ্রভু। এরপরেই তিনি নেমেছিলেন ব্রাহ্মণপাড়া ঘাটে। কিন্তু ওই পাড়ার মানুষ সেই রাতে তাঁকে আশ্রয় দেয়নি। কাজেই তাঁর পরম ভক্ত রাধানাথ চৌধুরীর ভিটেয় থাকা কদম গাছের নীচে ঠাঁই নিয়েছিলেন মহাপ্রভু। এরপরই ওই বাড়িতে রাধানাথবাবু প্রায় ৪২৫ বছর আগে চৈতন্য মহাপ্রভুর মন্দির তৈরি করেন। যেখানে আজও মহাপ্রভুর আরাধনা করা হয়। 

    অন্যদিকে, রাধানাথ চৌধুরীর পরম স্নেহের ভাগ্নে রঘুনন্দন সেন তখন বর্ধমানের শ্রীখণ্ডে বসবাস করেন। পরবর্তীতে রাধানাথ তাঁকে সপরিবারে মালদহের কোতোয়ালিতে চলে আসার নির্দেশ দেন। এরপরেই সেখান থেকে চলে আসেন রঘুনন্দন। মালদহে চলে আসার পর রঘুনন্দনের ছেলে যদুনন্দন একদিন রাতে মা দুর্গার স্বপ্ন পান- কোতোয়ালি সেনবাড়িতে দুর্গাপুজো হচ্ছে। বাবাকে জানানোর পরে সেই রাতেই রঘুনন্দন দেখেন, তাঁর স্বপ্নেও দেবী এসে বলছেন তাকে ছেড়ে দিয়ে সকলে চলে এসেছে মালদহে। সেখানে আর দুর্গা পুজো হচ্ছে না। তাই মালদহে পুজো করতে হবে। এরপরই ১২৬২ বঙ্গাব্দে কাটোয়ার শ্রীখণ্ড থেকে দেবীর বেদির মাটি মালদহের কোতোয়ালিতে এনে পুজো আরম্ভ হয়। সেই থেকে এখনও পুজো চলছে। প্রতিবছর সেনবাড়ির পুজোতে দেশবিদেশ থেকে তাদের সকল আত্মীয়-স্বজন এসে পুজোয় অংশ নেন। এই পরিবারের এক বিখ্যাত সদস্যের নাম চিত্রগ্রাহক সুধীন দাশগুপ্ত।  টলিউড অভিনেত্রী ঋত্বিকা সেনও এই পরিবারের সদস্য। এবছরও পুজোতে ঋত্বিকার আসার কথা রয়েছে। 

    এই বাড়ির প্রবীণ সদস্য শরদিন্দু সেন এবং তাঁর ছেলে জগৎজ্যোতি সেন বলেন, এই পুজোর ইতিহাস অত্যন্ত পুরনো শাক্ত এবং বৈষ্ণব রীতির মেলবন্ধনে এই পুজো হয়। এই পুজোতে হিন্দু-মুসলিমে কোনও ভেদাভেদ থাকে না। একসময় আব্দুল গনি খান চৌধুরী এই পুজোতে অঞ্জলি দিতেন। বর্তমানে তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও এই পুজোতে অংশ নেন।  মালদহের প্রাচীনতম পুজো আজও সম্পূর্ণ নিয়ম-নিষ্ঠা পালন করেই সম্পন্ন হয়। • সেনবাড়ির দুর্গামন্দির। - নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)