নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: মিড ডে মিলের খাবারে সাপ! খিচুড়িতে দু’মুখো হাফ বয়েল সাপ দেখে আতঙ্ক ছড়াল পড়ুয়া ও অভিভাবকদের মধ্যে। অজান্তে সেই খাবার কয়েকজন খেয়েও ফেলেন। চার বছরের এক শিশু সেই খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই খবর এলাকায় জানাজানি হতেই আরও আটজন চিকিৎসার জন্য হাসপাতলে ছোটেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে বহরমপুরের হাতিনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের হিকমপুর আইসিডিএস কেন্দ্রে ওই ঘটনায় তুমুল উত্তেজনা ছড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দারা কেন্দ্রে গিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। খবর পেয়ে বহরমপুর থানার পুলিশ ও জয়েন্ট বিডিও সহ অন্যান্য আধিকারিকরা সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
বহরমপুর সদরের মহকুমা শাসক শুভঙ্কর রায় বলেন, আমরা ঘটনার খবর পেয়েই জয়েন্ট বিডিও ও সিডিপিওকে ঘটনাস্থলে পাঠাই। কী করে খাবারের মধ্যে সাপটি পড়ল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফুড সেফটি অফিসারকে ওই খাবারের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। বিডিও ও সিডিপিওর কাছ থেকে এই ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে। যারা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিল, তাদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি।
বহরমপুর থানার আইসি উদয়শঙ্কর ঘোষ বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে আমরা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য পৌঁছই। অভিভাবকরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। আমরা তাঁদের শান্ত করি। চার বছরের শিশু ও তাঁর মা ওই খাবার খাওয়ার পর প্রাথমিকভাবে হাতিনগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর তাঁদের মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
এক পড়ুয়ার অভিভাবক লতিফ শেখ বলেন, খিচুড়ির মধ্যে সাপ ছিল। চাল-ডালের সঙ্গে সাপটি প্রায় সিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। অনেকেই না বুঝে সেটা খেয়ে ফেলেছে। সাত-আটজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পড়ুয়া এক শিশুর মা বলেন, এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে নিম্নমানের খাবার দেওয়া হয়। পোকামাকড় পড়ে থাকে। আমরা কিছু বলতে গেলে সেখানকার কর্মী ও সহায়িকা আমাদের সঙ্গে ঝগড়া করেন। এদিন খাবারে সাপ ছিল। স্থানীয় বাসিন্দা জুবের মোল্লা বলেন, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি খুবই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে। দু’বছর আগে একটা টিকটিকিও খাবারে পড়েছিল। এদিন খাবারের মধ্যে একটা দু’মুখো সাপ ছিল। কয়েকজন পড়ুয়া খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অপর এক পড়ুয়ার অভিভাবক বলেন, আমরা ওই খাবার যখন কেন্দ্রের দিদিমণিদের দেখাতে নিয়ে আসি, তখন ওরা মানতে চায়নি। ওরা প্রথমে বলতে চাইছিল, ওদের রান্নার মধ্যে সাপ ছিল না। অন্য জায়গা থেকে পড়েছে। এরা কখনই খাবার ভালো দেয় না। এখানে পড়াশোনা করানো হয় না। এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী ও সহায়িকাদের সরানো হোক। হাতিনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কৃষ্ণ মাঝি বলেন, হিকমপুর নতুন পাড়ায় আইসিডিএস কেন্দ্রে খাবারের মধ্যে একটা ছোট সাপ পাওয়া গিয়েছে। খবর পেয়ে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। খাবারটা খুব নিম্নমানের ছিল। খুবই অপরিষ্কার জায়গায় রান্নাবান্না হয়। এলাকাবাসীদের এনিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে। আইসিডিএস কেন্দ্রের মহিলাদের যে মিটিং হয় সেখানে এর আগে ওই কেন্দ্রের কর্মী ও সহায়িকাকে ওয়ার্নিং দেওয়া হয়েছিল। তারপরেও এই ঘটনা ঘটল। বিষয়টি জয়েন্ট বিডিওকে জানিয়েছি।