• ক্লাসরুমে বসে আকণ্ঠ মদ্যপান হলদিয়ার স্কুলের ৯ পড়ুয়াকে টিসি
    বর্তমান | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • শ্রীকান্ত পড়্যা, হলদিয়া: নন্দীগ্রামের পর হলদিয়া। শিক্ষাঙ্গনে পড়ুয়াদের বেয়াদপি ছড়াচ্ছে ভাইরাসের মতোই! কিছুদিন আগে নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের টাকাপুরা হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণির ১০ জন ছাত্রছাত্রী শ্রেণিকক্ষে মদ খেয়ে বেসামাল হয়ে পড়েছিল। সহপাঠীর জন্মদিনে শ্যাম্পেন খোলার স্টাইলে মদের ফোয়ারা উড়িয়ে তারপর পান করে। ঘটনাটি জানাজানি হতেই প্রধানশিক্ষক টিসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অভিভাবকদের অনুরোধে লঘু করেন শাস্তি। সম্প্রতি, একই ঘটনা প্রকাশ্যে এল হলদিয়ার   দেউলপোতা গ্রাম পঞ্চায়েতের সাপুয়া হাইস্কুল (উচ্চ মাধ্যমিক)-এ।  ক্লাসরুমেই আকণ্ঠ মদ গিলে মাতালদের মতো আচরণ করে একদল পড়ুয়া। সকলেই ক্লাস নাইনের ছাত্রছাত্রী। এক্ষেত্রে অবশ্য নমনীয় মনোভাব দেখাননি প্রধানশিক্ষক। পত্রপাঠ অভিযুক্ত পড়ুয়াদের টিসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। আগস্টে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরই ন’জন ছাত্রছাত্রীকে স্কুল থেকে বের করে দেন। সেশনের মাঝপথে টিসি দেওয়া আটকাতে অভিভাবকরা জোটবেঁধে প্রধান শিক্ষক ও স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতির হাতেপায়ে পর্যন্ত ধরেছিলেন। কিন্তু রেহাই মেলেনি। অগত্যা তাঁরা অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক ও জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাতেও লাভ হয়নি। স্কুলের গেটে আটকে অভিযুক্তদের টিসি নিতে বাধ্য করা হয়। শাস্তি পাওয়া ন’জন পড়ুয়ার মধ্যে পাঁচজন ছাত্র ও চারজন ছাত্রী। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পলাশ রায় বলেন, ‘স্কুলের মধ্যে এমন ঘটনা অনভিপ্রেত।’

    জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন সাপুয়া হাইস্কুলে ছাত্রছাত্রী উপস্থিতির হার বেশ কমই ছিল। সেই সুযোগে ওই ন’জন পড়ুয়া ক্লাসরুমে মদ্যপানের পরিকল্পনা করে। এক পড়ুয়া বাইরে বেরিয়ে মদ কিনে আনে। সবাই গলা পর্যন্ত মদ গিলে মাতলামো করা শুরু করে। মেয়েরা অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকে। ক্লাস নিতে গিয়ে এক শিক্ষক তাদের অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করেন। তিনি বিষয়টি প্রধান শিক্ষক দেবমাল্য চক্রবর্তীকে জানান। স্কুলটি ৫০ বছরেরও বেশি পুরনো। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এমন ঘটনা কোনওদিনই ঘটেনি। বিষয়টি জানার পর উত্তেজনায় কাঁপতে থাকেন দেবমাল্যবাবু সহ অন্যান্য শিক্ষকরা। সেদিনই মোটামুটি ঠিক করে ফেলেন, ওই ন’জন পড়ুয়াকে কোনওভাবেই ক্ষমা নয়। 

    এনিয়ে দফায় দফায় স্কুল পরিচালন কমিটির বৈঠক হয়। ওই ন’জন পড়ুয়াদের মধ্যে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির গত টার্মের এক সদস্যের মেয়েও রয়েছে। শুরুতেই তিনজন টিসি নিলেও বাকি ছ’জন স্কুলে আসা বন্ধ করে দেয়। আগস্ট মাসে ক্লাস পরীক্ষা ছিল। টিসি নিলে তাদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে বলে শর্ত চাপানো হয়। সেই শর্তে তারা পরীক্ষা দেয়। সম্প্রতি আরও ছ’জনকে টিসি দেওয়া হয়। 

    সাপুয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবমাল্য চক্রবর্তী বলেন, ‘ক্লাসরুমের ভিতর বসে মদ্যপান! ভাবতেই পারছি না। ছাত্রছাত্রীরা ঘটনাটি স্বীকার করে নিয়েছে। আমরা ন’জনকেই টিসি দিয়েছি। ওরা এই শাস্তি মেনে নিয়েছে।’ স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি রাধাকৃষ্ণ কর বলেন, ‘স্কুলের মধ্যে এমন অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। অভিভাবকরা আর্জি আমাদের পক্ষে মানা সম্ভব হয়নি।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)