• চোখ হারিয়েও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী প্রীতম
    বর্তমান | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: অভাবের সংসার। তারউপর ছেলেবেলায় দুর্ঘটনার শিকার। দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে দু’টি চোখ। জীবনের চাকাটা হয়তো তখনই থমকে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, স্রেফ জেদ আর অধ্যাবসায়কে সম্বল করে শান্তিপুরের প্রীতম দাস আজ অন্য পড়ুয়াদের কাছে ‘আইকন’। বার্তা দিচ্ছে, ইচ্ছে থাকলে কোনও বাধাই বাধা নয়। প্রীতমের বয়স এখন সতেরো। এবছর উচ্চমাধ্যমিকের তৃতীয় সেমেস্টারের পরীক্ষা দিচ্ছে সে। স্বপ্ন দেখে মানুষ গড়ার কারিগর হতে।  

    শান্তিপুরের সুত্রাগড়ে বাড়ি প্রীতমের। সূত্রাগড় এমএন হাইস্কুলের ছাত্র। সিট পড়েছে রাধারাণি উচ্চ বিদ্যালয়ে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, একেবারে ছোটবেলায় স্কুলে একটি দুর্ঘটনায় চোখে গুরুতর চোট পায় প্রীতম। তাতেই দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে। পরিবারের তরফে দৃষ্টিশক্তি ফেরাতে চেষ্টা নেহাত কম হয়নি। ভিনরাজ্যে টানা তিনবার অস্ত্রোপচার করিয়েও লাভ হয়নি। দৃষ্টি আর ফিরে পায়নি প্রীতম। সেই থেকে লড়াই শুরু। মনের জোরকে সঙ্গী করে পড়াশোনাই হয়ে উঠেছে তার জীবনের প্রধান লক্ষ্য। সে বুঝে গিয়েছে, চোখের আলো ফেরাতে পারে একমাত্র শিক্ষা। মাধ্যমিকে মাত্র ১১ নম্বরের জন্য প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হতে পারেনি প্রীতম। দৃষ্টিশক্তি না থাকায় অঙ্ক কষতে সমস্যা হয়। তাই ওই বিষয়েই কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে সে। কিন্তু, তাতেও কী আর মেধায় কোনও ঘাটতি থাকে? ভবিষ্যতে বাংলা নিয়ে পড়াশোনা করে একজন স্কুলশিক্ষক হতে চায় লড়াকু এই কিশোর।

    প্রীতমের বাবা প্রবীর দাস স্থানীয় একটি কাপড়ের দোকানে কর্মচারী। তাঁর স্বল্প রোজগার। সংসারে বেশ টানাটানি। তবু, ছেলের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নপূরণে কোনও কার্পন্য করতে চান না। আধপেটা পেটা খেয়েও ছেলের জীবন-যুদ্ধে সঙ্গী থাকার পণ নিয়েছেন। ছেলের লড়াইয়ের কথা বলতে গিয়ে বারবার চিবুক বেয়ে চোখের জল গড়িয়ে পড়ছিল। বলছিলেন, ‘প্রথম দিকে ওর খুব সমস্যা হচ্ছিল। কিন্তু আমাদের চেয়ে ওর মনের জোর অনেক বেশি। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে লড়াই করে চলেছে। আমরা বিশ্বাস করি, একদিন ও নিজের পায়ে দাঁড়াবে। আমরা আমাদের সবটা দিয়ে ওকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করব।’ চিকিৎসার মাধ্যমে চোখের আলো ফিরবে কি না, তা সময় বলবে। তবে, স্বপ্নের রঙিন রশ্মি এখনও নিভে যায়নি প্রীতমের। লড়াইয়ে জয়ী 

    হবে। আশাবাদী সকলেই। আশীর্বাদ ও শুভেচ্ছা। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)