• সাইবার জালিয়াতদের পাখির চোখ মুর্শিদাবাদ, পরিযায়ী শ্রমিক ও গরিবদের অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিয়ে লেনদেন
    বর্তমান | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: সাইবার জালিয়াতদের পাখির চোখ মুর্শিদাবাদ। জেলার পরিযায়ী শ্রমিক ও দিনমজুরদের ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিসের অ্যাকাউন্ট টার্গেট করছে তারা। গোটা দেশজুড়ে চলা ডিজিটাল অ্যারেস্ট ও সাইবার প্রতারণার কোটি কোটি টাকা ট্রান্সফার করা হচ্ছে প্রান্তিক মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। কখনও ভুল বুঝিয়ে তারা অ্যাকাউন্টের তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। নাহলে অল্প টাকার বিনিময়ে লোভ দেখিয়ে অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিয়ে চলছে দেদার লেনদেন। পরে পুলিশের কাছ থেকে নোটিশ পাওয়ার টনক নড়ছে এইসব শ্রমিকদের। সম্প্রতি হরিহরপাড়ায় এক দিনমজুরের পোস্ট অফিসের অ্যাকাউন্টে ৭ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা জমা পড়তেই তদন্ত শুরু হয়। এই ঘটনাটি নজরে আসার পর নড়েচড়ে বসেছে মুর্শিদাবাদ জেলার সাইবার থানার পুলিশ। ওই দিন মজুরের অ্যাকাউন্টে কোথা কোথা থেকে টাকা লেনদেন হয়েছে, সেটাও খুঁজে বের করছে তদন্তকারীরা। 

    তবে, পুলিশ আধিকারিকদের অনুমান, শুধু হরিহরপাড়ার ওই যুবক নয়, জেলার এরকম বহু দিনমজুর এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের অ্যাকাউন্ট হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণার কোটি কোটি টাকা ট্রান্সফার করছে সাইবার ক্রিমিনালরা। উত্তরপ্রদেশের সাইবার গ্যাংয়ের প্রতারণার টাকা হরিহরপাড়ার ওই যুবকের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে বলেই মনে করে পুলিশ। মির্জাপুর সাইবার ক্রাইম থানার তরফে ওই যুবককে নোটিশ করা হয়। নোটিশ পেয়ে আকাশ থেকে পড়েন পরিবারের লোকজন। ওই যুবকের মা মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের সাইবার থানার দ্বারস্থ হলে পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শুরু করে। তারপর তদন্তে উঠে আসছে একের পর এক তথ্য। 

    তদন্ত নেমে সাইবার পুলিশ জানতে পারে, ওই দিনমজুরের কাছ থেকে স্থানীয় তিন যুবক পোস্ট অফিসের অ্যাকাউন্টের পাসবই নিয়েছিল। তাদের মারফত উত্তরপ্রদেশের সাইবার গ্যাংয়ের কাছে চলে যায় এই যুবকের পোস্ট অফিসের অ্যাকাউন্টের তথ্য। সেই অ্যাকাউন্টে সাইবার প্রতারণার ৭ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওই দিনমজুর যুবক কিছুই জানতে পারেনি। সাইবার থানার পুলিশ পৃথক মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। বুধবার দুপুরে হরিহরপাড়ার তিন যুবক আব্দুল রফ শেখ, শাহাবুল শেখ, রাকেশ মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। 

    তবে, এরা প্রথম নয়, এর আগেও জামতাড়া গ্যাংয়ের সদস্যরা ডোমকলে রীতিমতো এজেন্ট নিয়োগ করে দিনমজুর ও পরিযায়ী শ্রমিকদের অ্যাকাউন্ট হাতানোর চেষ্টা করছিল। গত, ১৮ জুলাই বহরমপুরের মল্লিকপাড়ার এক মহিলার সাইবার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগে তিনি জানান, মুকলেশ হোসেন নামে এক ব্যক্তি ২৫ জুন তাঁর কেওয়াইসি আপডেট করার নাম করে পাশবই, এটিএম, সিম কার্ড সব নিয়ে নেয়। কিছুদিনের মধ্যে তাঁর নামে বেআইনি লেনদেনের অভিযোগে নোটিশ আসে সাইবার থানার তরফে। 

    মুর্শিদাবাদ জেলার পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, বুধবার হরিহরপাড়া তিন যুবকের পাশাপাশি ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের আরও এক সাইবার ক্রিমিনালকে আমরা পাকড়াও করেছি। ওই তিন যুবক অ্যাকাউন্টের তথ্য হাতিয়ে প্রতারকদের হাতে তুলে দিত। আর বিভিন্ন রাজ্যে বসে থাকা সাইবার প্রতারকরা ওই অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করত।
  • Link to this news (বর্তমান)